তাহাজ্জুদ নামাজ হলো ইসলামে একটি বিশেষ নফল নামাজ, যা সাধারণত রাতের ঘুম থেকে উঠে আদায় করা হয়। হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সা্ল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ফরজ নামাজের পর সব নফল নামাজের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো তাহাজ্জুদ নামাজ তথা রাতের নামাজ।’ (মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ)
তাহাজ্জুদ নামাজের সময়:
পবিত্র কোরআনের সূরা বনি ইসরাইলে ৭৯নং আয়াতের অর্থ এই যে, রাতের কিছু অংশ কোরআন পাঠসহ জাগ্রত থাকুন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও তাসবিহ
অর্ধ রাতের পরে। রাতের শেষ তৃতীয়াংশে পড়া উত্তম। সাধারণত রাত ১২:০০ টার পর থেকে সকাল ৪:০০ টা পর্যন্ত, ফজর আজানের আগ পর্যন্ত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া যায়। তবে ঘুম থেকে না জাগার সম্ভাবনা থাকলে ইশা সালাতের পর দু রাকআত সুন্নত ও বিতরের আগে তা পড়ে নেয়া জায়েজ আছে। তবে পরিপূর্ণ তাহাজ্জুতের মর্যাদা পেতে হলে, রাত ২টা বা ৩টার দিকে উঠে নামায আদায় করতে হবে।
When perform tahajjud namaz ( Namaz Time):
There is no specific time to perform Tahajjud Namaz, but it is generally recommended to pray it after Isha and before Fajr.
Generally, Tahajjud prayers can be performed after the Esha prayer until the morning’s Fajr prayer. However, many people fall asleep at night and wake up one hour before Fajr prayer and perform Tahajjud prayer(Salat). However, it seems that the best time for Tahajjud is the last third part of the night, which is about 1 hour before FAJR or the last hour of FAJR.
আরও পড়ুন:
- ১১টি শ্রেষ্ঠ তাসবিহ, দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করুন
- পবিত্র কোরানের এই আয়াতটি রিজিক বৃদ্ধির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত আরবিতে
نَوَايْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلَّّهِ تَعَالَى رَكْعَتَىْ صَلَوةِ التَّهَجُّدِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا اِلَى
جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ
আরবিতে বাংলা উচ্চারণ
নাওয়াইতু আন উসালি্লয়া লিল্লাহি তা’আলা রাকা’আতাই সালাতিল তাহাজ্জুদী সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা’আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলাজিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত বাংলায়
আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাহাজ্জুদের দুই রাকাআত নামাজ পড়ার নিয়ত করলাম। আল্লাহু আকবার
তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত না নফল: Is tahajjud Sunnah or nafl?
এটি একটি নফল ইবাদত তবে তাহাজ্জুদের নফল নামাজকে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শ্রেষ্ঠ নফল ইবাদত হিসাবে অ্যাখ্যায়িত করেছেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার আগে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর তাহাজ্জুদ নামাজ বাধ্যতামূলক ছিল। তাই তিনি জীবনে কখনো তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া থেকে বিরত হননি এবং সাহাবীদের এটা পালনে উৎসাহিত করতেন।
সূরা বনী ইসরাইলের ৭৯ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-
وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَّكَ عَسَى أَن يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُودًا
রাত্রির কিছু অংশ কোরআন পাঠ সহ জাগ্রত থাকুন। এটা আপনার জন্যে অতিরিক্ত। হয়ত বা আপনার পালনকর্তা আপনাকে মোকামে মাহমুদে পৌঁছাবেন।
আল্লাহ তার বান্দাদের রাত্রির কিছু অংশ কুরআন তিলাওয়াত আর নামায কায়েম করার মধ্য দিয়ে জাগ্রত থাকার জন্য বলেছেন।
তাহাজ্জুদ নামাজ কি কি সূরা দিয়ে পড়তে হয়?:
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই দুই রাকাআত করে এ নামাজ আদায় করতেন। যে কোনো সুরা দিয়েই এ নামাজ পড়া যায়। তবে তিনি লম্বা কেরাতে নামাজ আদায় করতেন। তাই লম্বা কেরাতে তাহাজ্জুদ আদায় করা উত্তম।
১. তাকবিরে তাহরিমা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নিয়ত বাঁধা।
২. অতঃপর ছানা পড়া।
৩. সুরা ফাতেহা পড়া।
৪. এরপর কোরআনের যেকোন একটি সুরা মিলানো তথা কেরাত পড়া।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক লম্বা কেরাত পড়তেন। অতঃপর অন্যান্য নামাজের ন্যায় রুকু, সেজদা আদায় করা। এভাবেই দ্বিতীয় রাকাআত আদায় করে তাশাহহুদ, দরূদ ও দোয়া মাছুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করা।
তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্বঃ
- আল্লাহর প্রিয় নামাজ: হাদিসে বর্ণিত আছে, ফরজ নামাজের পর সব নফল নামাজের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো তাহাজ্জুদ নামাজ।
- ইবাদতের উচ্চতম স্তর: তাহাজ্জুদ নামাজ ইবাদতের একটি উচ্চতম স্তর। এটি ইমানের দৃঢ়তা, তাকওয়ার বৃদ্ধি এবং আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা বাড়াতে সাহায্য করে।
- দোয়ার কবুল হওয়ার সম্ভাবনা: রাতের একান্ত সময়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করলে তা সহজে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- রোজার জন্য শক্তি: রমজান মাসে তাহাজ্জুদ নামাজ রোজার জন্য শারীরিক ও মানসিক শক্তি জোগায়।
তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাআত:
তাহাজ্জুদ নামাজ ২ থেকে ১২ রাকাআত পর্যন্ত পড়া বর্ণনা পাওযা যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.)কখনো ৪ রাকাত, কখনো ৮ রাকাত এবং কখনো ১২ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়েছিলেন।
নামায পড়ার কিছু টিপস এখানে দেওয়া হলঃ
- নামাজ শুরু করার আগে সঠিক নিয়ত নিশ্চিত করুন।
- মসজিদের জামাতে, যদি সম্ভব হয়, তাহাজ্জুদ নামায পড়তে পারেন।
- বাড়িতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার সময় আপনার পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে নিয়ে নামাজ পড়ার চেষ্টা করুন। তবে, একাকীও এই নামাজ পড়া যায়।
- আপনার নামাজের প্রতি মনোযোগী হওয়া এবং আল্লাহর ইবাদতের প্রতি মনোযোগী হওয়া নিশ্চিত করুন।
- আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়লে, একটি ছোট বিরতি নিন এবং তারপর আপনার প্রার্থনা পুনরায় শুরু করুন।
- আপনি তাহাজ্জুদ নামাজ শেষ করার পরে, আপনি কিছু অতিরিক্ত তাসবিহ (দুআ) ও কোরআন পড়ে আল্লাহর কাছে মোনাজাত বা দোয়া করতে পারেন।