ভারতের শিলংয়ের জুয়াড়িরা অনলাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশে ভয়ংকর জুয়ার বিস্তার ঘটিয়েছে। এই জুয়া চক্রের এজেন্ট চার বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে।
গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার (২৪ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৫টায় গুলশান থানাধীন কালা চাঁদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ‘শিলং তীর‘ জুয়ার এজেন্ট শামিম ও আব্দুল আলীকে আটক করে তাদের কাছ থেকে তথ্য নেওয়া হয়। পরে মঙ্গলবার নেত্রকোনার কলমাকান্দা থানার বড়ুয়াপনা বাজার থেকে এজেন্ট এরশাদ ও সোহাগকে আটক করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়া হবে।
ডিএমপির এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, শিলংয়ের জুয়াড়িরা বাংলাদেশে এজেন্ট নিয়োগ দেয়। এজেন্টরা আবার বিভিন্ন এলাকায় সেলসম্যান নিয়োগ করে। তাদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে ভয়ানক ‘শিলং তীর’ নামক জুয়ায় আসক্ত করে সর্বস্বান্ত করে। এজন্য ভারতের শিলংভিত্তিক ওয়েবসাইট ব্যবহার করে তারা। ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া ১ থেকে ৯৯ পর্যন্ত নম্বরগুলো বিক্রি করা হয়। যারা এসব নম্বর কেনেন তাদের সঙ্গে সেলসম্যানরা যোগাযোগ করেন। তখন জুয়াড়িরা সেলসম্যানের কাছে নম্বর ও বিভিন্ন অংকের টাকা দেন। সেলসম্যানরা বিক্রিত এই নম্বরের বিপরীতে এজেন্টের কাছে টাকা দেন। ভারতের শিলংয়ে রোববার ছাড়া সপ্তাহের ৬ দিন বাংলাদেশ সময় সোয়া ৪টায় জুয়ার ড্র হয়। ড্রতে ১ থেকে ৯৯ এর মধ্যে একটি নম্বর বিজয়ী হয়। ওই নম্বরের ক্রেতা বিজয়ী হিসেবে গণ্য হয়। বিজয়ী নম্বরের ক্রয়মূল্যের ৮০ গুণ টাকা এজেন্টের মাধ্যমে পেয়ে থাকেন। কিন্তু বেশিরভাগ জুয়াড়ি বিজয়ী হতে না পেরে তাদের পুঁজি হারিয়ে ফেলেন। জুয়াড়ি, সেলসম্যান এবং এজেন্টের মধ্যে সব লেনদেন হয় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে।
১৯৯০ সালে সিলেটের সীমান্তবর্তী ভারতের শিলং ও গৌহাটি এলাকায় চালু হয় এ জুয়া খেলা। পরে এটি ছড়িয়ে পরে সিলেটের বিভিন্ন প্রান্তে। সেখান থেকে বিস্তার ঘটে নেত্রকোনায় ও রাজধানীতে। সেলসম্যানরা জুয়াড়িদের কাছ থেকে সংগৃহীত টাকার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন রেখে বাকি টাকা ঢাকার এজেন্ট শামিম ও আব্দুল আলীর কাছে পাঠান। শামিম ও আব্দুল আলী তাদের কমিশন রেখে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা নেত্রকোনার এজেন্ট এরশাদ ও সোহাগদের কাছে পাঠান। জাফলং থেকে সেই টাকা হুন্ডির মাধ্যমে ভারতের শিলংয়ে চলে যায়।
বুধবার (২৬ আগস্ট) বিকেলে গোয়েন্দা পুলিশের অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. নাজমুল হক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এই জুয়া চক্রের বিরুদ্ধে অনেক দিন ধরে তদন্ত চলছিল। নিশ্চিত হওয়ার পরেই তাদের আটক করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাকিদের আটক করা হবে।’