করোনা প্রতিরোধী কোনো টিকা পাওয়া গেলে তা বিশ্বজুড়ে দ্রুত ও ভারসাম্যপূর্ণ বিতরণের উদ্দেশ্যে এক ঐতিহাসিক চুক্তিতে সম্মত হয়েছে ১৫৬টি দেশ। চুক্তি অনুযায়ী, টিকা পাওয়া মাত্রই স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনা এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামনের সারিতে থাকা স্বাস্থ্যকর্মী ও সেবা খাতে নিয়োজিত ব্যক্তিদের সুরক্ষা নিশ্চিতে তা আগে দেওয়া হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সব সদস্য দেশে তাদের জনসংখ্যার ৩ শতাংশের মধ্যে প্রথমে এই টিকা বণ্টন করা হবে। খবর দ্য গার্ডিয়ান ও ইউরো নিউজের।

জেনেভায় গত সোমবার এক ব্রিফিংয়ে এ চুক্তির তথ্য জানান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস। তিনি বলেছেন, কোভ্যাপই এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও করোনার টিকার সবচেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ পোর্টফোলিওর প্রতিনিধিত্ব করছে। কোভ্যাপের কাছে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ ও অঞ্চল প্রাধান্য পাচ্ছে।

কোভ্যাপ হলো প্রাণঘাতী করোনার টিকা উদ্ভাবনে গবেষণা, ক্রয় এবং তা সমভাবে বিতরণে বিশ্বের ধনী দেশগুলোর পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলোর অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত একটি উদ্যোগ।কোভ্যাপই বিশ্বজুড়ে সমভাবে টিকা বিতরণের এ পরিকল্পনা নিয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সাল শেষ হওয়ার আগেই বিশ্বজুড়ে নিরাপদ ও কার্যকর ২০০ কোটি ডোজ টিকা বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সরকার ও সংস্থা, টিকা প্রস্তুতকারক ও ব্যক্তি এখন পর্যন্ত করোনার টিকার গবেষণা ও উন্নয়নে ১৪০ কোটি ডলার সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

জেনেভায় ব্রিফিংয়ে টেড্রোস আধানম বলেন, শুরুর দিকে একটি কার্যকর ভ্যাকসিনের সরবরাহ কম হতে পারে, এমনটি বিবেচনায় নিয়ে সদস্য দেশগুলোর জনসংখ্যার সুনির্দিষ্ট ৩ শতাংশের মধ্যে এটি পৌঁছে দেওয়া হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সব দেশের ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে টিকা সরবরাহ ২০ শতাংশে উন্নীত করা হবে। তিনি আরও বলেন, ‘কোভ্যাপের প্রকল্প সব দেশের কিছু মানুষের টিকা পাওয়া নিশ্চিত করবে, কিছু দেশের সব মানুষের নয়।’

চলমান করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে ‘ভ্যাকসিন ন্যাশনালিজমের’ ক্রমবর্ধমান হুমকি মোকাবিলার লক্ষ্যে এবং মহামারি মোকাবিলায় শুধু ভ্যাকসিনই নয়, সব ধরনের চিকিৎসা সরঞ্জামে সবার প্রবেশগম্যতা ও বরাদ্দ নিশ্চিতে গ্যাভি, ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড ইনোভেশনের (সেপি) নেতৃত্বে কোভ্যাপ গড়ে উঠেছে। উচ্চ আয়ের ৬৪টি দেশ এরই মধ্যে কোভ্যাপে যুক্ত হয়েছে। ৩৫টি দেশ ও ইউরোপীয় কমিশনের পক্ষ থেকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। ৩৮টি দেশ এই উদ্যোগে শিগগির যুক্ত হবে বলে কোভ্যাপের বিশ্বাস।

করোনার ভ্যাকসিনের সমবণ্টনে ১৫৬ দেশের এ চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে সেপি ও গ্যাভি। সেপির প্রধান নির্বাহী ড. রিচার্প হ্যাচেট এই চুক্তি স্বাক্ষরের ক্ষণকে ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, প্রত্যেক মহাদেশের সরকারগুলোকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। শুধু নিজেদের জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিত করলেই হবে না, বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর কাছে সহজে টিকা পৌঁছানোর বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here