জন্মের পর শিশুর ত্বকের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরী। এই সময় শিশুর ত্বক খুবই নাজুক থাকে। আমরা আজকে এখানে শিশুর ত্বকের যত্নের ১০টি উপায় নিয়ে কথা বলব।
শিশুর ত্বকের যত্ন করার উপায়:
১. নবজাতক শিশুর ত্বক:
নবজাতকের জন্মের পর অন্য সবকিছুর পাশাপাশি শুরু থেকেই এ ব্যাপারটির উপর বাবা মায়ের গুরুত্ব দেয়া জরুরী সেটি হচ্ছে শিশুর ত্বক। মনে রাখবেন, জন্মের পর নবজাতক শিশুর ত্বক বেশ নাজুক থাকে। সেই সাথে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাও। তাই একদম শুরুতেই হঠাৎ করেই কোন ধরণের ক্রিম, তেল, সুগন্ধী বা কাপড় ব্যবহার করলে তা শিশুর চামড়ায় শুষ্কতা, এমনকি লালচে র্যাশের মত সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এই ব্যাপারগুলো নিয়ে সন্তান জন্মের আগে থেকে সাবধান হওয়া উচিৎ।
২. ভারনিক্স:
সন্তান জন্মের পর শিশুর জন্য কোমল এবং উষ্ণ আরামদায়ক জায়গার ব্যবস্থা করা। শিশু জন্মের পর তার শরীরের চামড়ায় ভারনিক্স (Vernix) নামের এক ধরণের তেল জাতীয় পদার্থ থাকে। এই পদার্থ অনেকটা অ্যান্টিবডির (Antibody) মত কাজ করে। বাইরের ধুলো বালি কিংবা অন্য কিছু যা শিশুর ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে সব ত্বকের সংস্পর্শে আসতে বাধা দেয়।
৩. শিশুর গোসলের নিয়ম:
একজন নবজাতকের জন্য গোসলের নিয়ম হচ্ছে সপ্তাহে তিনবার। তবে অবশ্যই সেটা পানি ঢেলে গোসল নয়, স্পঞ্জ কিংবা নরম কাপড় হালকা কুসুম গরম পানিতে চুবিয়ে শরীর মুছে ফেললেই হবে। এর বেশি গোসল করালে শিশুর ঠান্ডা লেগে যাবে, সেই সাথে ত্বকের তেলের আস্তর সরে গেলে একজিমার (Eczema) মত ভয়াবহ চামড়ার রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।
৪. নবজাতক শিশুর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা:
সাধারণত মুখের লালা এবং ডায়াপার ছাড়া নবজাতক শিশু খুব একটা নোংরা হয় না। তাই সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার স্পঞ্জ দিয়ে গা মুছে দিলেই যথেষ্ট। আর দিনে একবার ক্লিনজার কিংবা অল্প একটু পানি দিয়ে মুখের ভেতরটা পরিষ্কার করে নিলেই হবে। শিশুর জন্মের পর অন্তত এক বছর এই নিয়ম অনুসরণ করা উচিৎ।
৫. বেবী প্রোডাক্ট ব্যবহার:
শিশুর জন্মের পর তাদের শরীরে বিভিন্ন দেশী বিদেশী বেবী প্রোডাক্ট ব্যবহার করে থাকি। সেক্ষেত্রে কিছু বিষয় যেমন…শিশুর জন্মের পর অন্তত প্রথম ৬ মাস বেবী প্রোডাক্ট সাবধানে ব্যবহার করা।
আপনার বংশে যদি এলার্জি কিংবা অ্যাজমা (Asthma) এর রেকর্ড থেকে থাকে, তাহলে ব্যবহার না করা। কারণ নামে উপকারী হলেও এইসব বেবী প্রোডাক্ট শিশুর শরীরের প্রাকৃতিক আবরণ নষ্ট করে, যার কারণে শিশুর ত্বকে স্কিন ইনফেকশন (Infection) হতে পারে।
৬. শিশুর বিছানাপত্র এবং কাপড়:
নিয়মিত শিশুর বিছানাপত্র এবং কাপড় গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। এক্ষেত্রে যা করা থেকে বিরত থাকতে হবে যেমন…সুগন্ধী ডিটারজেন্ট (Detergent) ব্যবহার থেকে বিরত থাকা। পরিবারের অন্য সদস্যদের জামা কাপড়ের সাথে শিশুর কাপড় না মেলানো।
৭. শিশুর ডায়াপার:
আপনার শিশুর ডায়াপার (Diaper) নিয়মিত চেক করবেন। অধিক সময় ধরে নোংরা ডায়াপার পরা থাকলে শিশুর চামড়ায় র্যাশ (Rash) হতে পারে, যা শিশুর জন্য ক্ষতিকর।
৮. বেবী ওয়াইপ
শিশুর ত্বক মোছার জন্য বাজারের বেবী ওয়াইপ (Wipe) না ব্যবহার করাই ভালো, কারন বেবী ওয়াইপে থাকা ক্যামিক্যাল শিশুর ত্বকের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। তাই এর পরিবর্তে পরিষ্কার নরম কাপড় ব্যবহার করুন।
৯. পেট্রোলিয়াম জেলী ব্যবহার:
শিশুর স্পর্শকাতর অঙ্গগুলোতে পেট্রোলিয়াম জেলী ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া যদি বেবী ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করেন, তবে লক্ষ্য রাখবেন পাউডার যাতে শিশুর মুখের দিকে না যায়। এতে শিশুর শ্বাসের সমস্যা হতে পারে।
১০. শিশুর ত্বক ম্যাসাজের নিয়ম:
শিশুর ত্বক কে আরো স্বাস্থ্যকর কর তুলতে ম্যাসাজ করতে পারেন। তবে সেটা অবশ্যই জন্মের অন্তত দশ সপ্তাহ পর থেকে। একটি উষ্ণ রুমে শিশুকে ভাঁজ করা কম্বলের উপর উপুড় করে শোয়ান। এরপর স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ বেবী লোশন কিংবা বেবী অয়েল হাতে মেখে নিয়ে আলতো করে শিশুর শরীরে বুলান। মনে রাখবেন, শিশুর শরীরে যাতে চাপ না লাগে। এতে শিশু ব্যাথা লাগতে পারে। সাবধানে আলতো ভাবে সারা শরীরে ম্যাসাজ করুন। এতে শিশুর চামড়া নরম এবং স্বাস্থ্যকর হবে।