প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোভিড-১৯ মোকাবেলায় মানসম্পন্ন ভ্যাকসিনের সার্বজনীন ও ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি এটি স্থানীয়ভাবে উৎপাদনে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং মহামারী পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদানসহ তিনটি অগ্রাধিকার ক্ষেত্রে জরুরি মনোযোগ এবং আরও বৈশ্বিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা একটি টেকসই বিশ্বের জন্য ২০৩০ এজেন্ডা সম্পাদনে নতুনভাবে প্রতিশ্রুতি নেই, যেখানে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ভবিষ্যতের মহামারি মোকাবিলায় সক্ষম হবে।’
কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৩১তম বিশেষ অধিবেশনে আগে থেকে ধারণকৃত বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কিছু অগ্রাধিকার ক্ষেত্রে জরুরি মনোযোগ এবং আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। প্রথমত, আমাদের যথাসময়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে ও সাশ্রয়ী মূল্যে সবার জন্য মানসম্মত ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।”
জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন (ন্যাম)-এর বর্তমান চেয়ার আজারবাইজান এবং জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া দুই দিনের এ বিশেষ অধিবেশন ডেকেছেন।
শেখ হাসিনা আরও বলেন যে ২০৩০ সালের উন্নয়ন এজেন্ডা সমতার নীতি দ্বারা পরিচালিত এসডিজি অর্জনে সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজের মৌলিক ভূমিকার স্বীকৃতি দেয়। তিনি বলেন, “একইভাবে, যখন ভ্যাকসিন প্রাপ্তির কথা আসে, তখন কাউকে পিছনে রাখা সমীচীন হবে না। এটি মহামারী পরাস্ত করতে, জীবন বাঁচাতে এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত করতে আমাদের সহায়তা করবে।”
দ্বিতীয়ত, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনকে গোটা বিশ্বের জন্য একটি ‘বৈশ্বিক জনপণ্য বিবেচনা করতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডব্লিবউএইচও’র অ্যাক্ট এবং কোভাক্স সুবিধার উদ্যোগ এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি আরও বলেন, “উন্নত দেশগুলোর ট্রিপস চুক্তির আওতায় আইপি রাইটস ওয়েভার ব্যবহার করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্থানীয়ভাবে ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। বাংলাদেশের সক্ষমতা রয়েছে এবং সুযোগ পেলে ভ্যাকসিন তৈরি করতে প্রস্তুত রয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তৃতীয়ত, কোভিড-১৯-এর পরিপ্রেক্ষিতে আর্থিক সহায়তাসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেগুলোকে বিশেষভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। জাতীয় সরকারসমূহের পাশাপাশি জাতিসংঘ, আইএফআই, সুশীল সমাজকে তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং কোভিড-১৯ মোকাবেলায় একে অপরের সাথে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করতে হবে।”
তিনি বলেন, সারা বিশ্ব এখনও এই মারাত্মক ভাইরাস এবং এর প্রভাব মোকাবেলায় এক কঠিন সময় পার করছে। এ প্রেক্ষাপটে এ অধিবেশন সর্বোচ্চ গুরুত্ব বহন করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তবে আমরা শুরু থেকেই এবং কার্যকরভাবে হস্তক্ষেপ করেছি এবং আমাদের অর্থনীতি ও জনগণকে মহামারি থেকে রক্ষায় সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছি,’ বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি জানান, সরকার ব্যবসা, কর্মসংস্থান ও উৎপাদনশীলতার ওপর প্রভাব হ্রাস করতে ১৪.১৪ বিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যা দেশের জিডিপির ৪.৩ শতাংশের সমান।
কোভিড মহামারিটির দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে ব্যাপক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।