প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি রোধে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সারাদেশে ‘লকডাউন’ শুরু হয়েছে।
সোমবার সকাল ৬টা থেকে আগামী ১১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত সাত দিন এটা বহাল থাকবে। রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে।
লকডাউনের শুরুতে রাজধানীতে সকাল থেকে যান চলাচল ছিল কিছুটা কম। চলছে না গণপরিবহন। কিছু প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব বাস চলছে। সড়কজুড়ে রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ি দেখা গেছে। মার্কেট বা শপিং মলগুলো বন্ধ রয়েছে। তবে নিত্যপণ্যের দোকান খোলা রয়েছে।
রোববার জারি হওয়া সরকারি প্রজ্ঞাপনে সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে লকডাউনের বিধিনিষেধ কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। লকডাউন চলাকালে জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছু বন্ধ থাকছে।
সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিল্পকারখানা, নির্মাণ কাজ চালু থাকলেও নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থায় আনা-নেওয়া করতে হবে। একই সঙ্গে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ কর্তৃপক্ষকে অসুস্থ শ্রমিকদের জন্য শিল্পকারখানার কাছাকাছি ফিল্ড হাসপাতাল অথবা চিকিৎসার ব্যবস্থা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
লকডাউন চলাকালে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সীমিত আকারে ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু থাকবে। সারাদেশে জেলা ও মাঠ প্রশাসন বিধিনিষেধগুলো বাস্তবায়ন করবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত টহল দেবে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
তবে লকডাউন কার্যকর করতে শুরুতেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে সরকার। প্রজ্ঞাপন জারির পরপরই এর প্রতিবাদে রোববার দুপুরে রাজধানীর কয়েকটি স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, কোনো কোনো খাতকে ছাড় দিয়ে আবার কোনো কোনোটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা অন্যায়। রমজান ও ঈদের সময় কেনাবেচা হয়। বছরজুড়ে দোকান মালিকরা এই সময়টার দিকে তাকিয়ে থাকেন। এই সময়ের ব্যবসা দিয়ে তারা সারা বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নেন। সুতরাং এ ধরনের আদেশ তারা মানবেন না বলেও ঘোষণা দেন।
সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব পরিবহনে কর্মীদের আনা-নেওয়ার নির্দেশনা কতটুকু পালন করবে, তা নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে লকডাউনের আদেশ আমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বার্তা দেওয়া হয়েছে।
লকডাউনের আগের দিন রোববার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঢাকা ছেড়েছে হাজার হাজার মানুষ। রাজধানীর বাজার, রেল, বাস, লঞ্চ স্টেশনে মানুষের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সাত দিনের ছুটিতে অনেকে গ্রামে ফিরে গেছেন। আবার নানা কাজে ঢাকায় আসা অনেকেই ফিরে গেছেন। মাওয়া, শিমুলিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঘরমুখো মানুষের ছিল উপচেপড়া ভিড়। মহাসড়কগুলোতে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীর নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজারগুলোতে ব্যাপক ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এই ভিড় আরও উচ্চহারে সংক্রমণের ভয় জাগাচ্ছে।