ishrak-namaz

ইসলামে প্রত্যেক মুমিন ব্যক্তির জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরজ করা হয়েছে। তবে এই ৫ ওয়াক্ত ছাড়াও আরো কিছু নামায আছে, যা ইসলাম ধর্মে খুবই ফজীলত পূর্ণ। ১৭ রাকাআত পরজ সালাত আদায় করার পাশাপাশি মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) আমাদেরকে আরও কিছু নফল সালাত আদায় করার জন্য আদেশ করেছেন। আর ইশরাক নামাযও তেমন। ইশরাক নামায আদায় করার নিয়ম ও এর ফজীলত আজকের আলোচ্য বিষয়।

আরও খবরঃ

ইশরাক নামায কী? 

ইশরাক শব্দের অর্থ  আলোকিত হওয়া। সালাতুল ইশরাক নামাযের সাথে আলোকিত হওয়ার সম্পর্ক আছে। সূর্য উদিত হওয়ার পর পুরো পৃথিবী আলোকিত হয়। আর সূর্য উদিত হওয়ার সময়ে, আদায় করার লক্ষ্যে  হাদিসে যে নামাজের ইঙ্গিত করা হয়েছে, তাই হলো ইশরাকের নামায। মুহাদ্দিসিনে কেরামগণ সালাতুল ইশরাক বলে এই নামাযকে আখ্যায়িত করেছেন।

ইশরাক নামাযের সময় প্রতিদিন ফরজের পর দিয়ে শুরু হয়৷ ফজরের নামায আদায় করার পর সূর্যোদয়ের সময় থেকে পরবর্তী ১ প্রহর পর্যন্ত এই নামায আদায় করার সময় থাকে। ইশরাক নামায আদায় করা কোনো ব্যক্তির উপর-ই ফরজ নয়। সর্ব সাধারনের জন্য এই নামায সুন্নতে গায়রে মোয়াক্কাদাহ্।

ইশরাক নামায কত রাকাত?

মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করার লক্ষ্যে এই সালাত আদায় করা ভালো৷ ইশরাকের নামায চাইলে ২ রাকআত থেকে শুরু করে ১২ রাকআত পর্যন্ত পড়া যায়৷ তবে প্রত্যেক বার ২ রাকাত করে আদায় করার জন্য নিয়ত করতে হয়।

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) ২ রাকআত করে ২ বারে মোট ৪ রাকআত ইশরাক নামায আদায় করতেন। সুতরাং প্রতিটি মুমিন ব্যক্তির উচিত, ফজরের ৪ রাকআত নামাজ আদায় করার পরে সূর্যোদয়ের অন্তত ১৫ থেকে ২৫ মিনিট পর ইশরাকের নামায আদায় করা। কিবলা মুখী হয়ে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে দুই রাকাআত করে মোট ৪ রাকাআত নামাজ পড়া।

আমাদের উচিত, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর অনুসরণ করা।

ইশরাক নামায কী ফজরের পরপরই আদায় করতে হয়?

ইশরাকের নামায আদায় করার জন্য নির্দিষ্ট সময় সূর্যোদয় থেকে ২৫ মিনিট পর থেকে শুরু হয় (তবে মতান্তরে, কারো মতে এই নামাযের সময় সূর্যোদয় থেকে ১০ বা ১৫ মিনিট পরে শুরু হয়। কেউ বলেন, সূর্য উদিত হওয়ার পর দেড় মিটারের মতো সরে যাওয়া পর্যন্ত এই নামায আদায় করার সময় থাকে)।

তাছাড়া কুরআন তিলাওয়াত করা যেতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সঃ) সূর্য ওঠার একদম সাথে সাথেই এ নামাজ আদায় করতেন না বরং খানিকটা পরে আদায় করতেন।

তো, এর ভেতরে যেকোনো সময়েই এই নামায আদায় করা যায়। তবে, ফজরের দুই রাকাত সুন্নত ও দুই রাকাত ফরজ নামায আদায় করার পর, জায়নামাজে বসে দোয়া করা ও দরুদ পাঠ করা উত্তম।

অতঃপর সূর্যের আলো দেখা দিলে তার ২৫ মিনিট পরে ইশরাক সালাত আদায় করে নেয়া যায়। তবে কোনো কারণে এর ব্যতিক্রম হলে এই নামায খানিকটা পরেও আদায় করা যাবে। তবে নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলে আর ইশরাক নামাযের সময় থাকে না।

ইশরাক নামাযের নিয়ত

নির্দিষ্ট করে ইশরাক নামায আদায় করার কোনো নিয়ত নেই। শুধুমাত্র ‘আল্লাহু আকবর’ বলে ইশরাকের নামায শুরু করা যায়। তবে চাইলে নিম্নোক্ত নিয়ত দ্বারা এই নামায শুরু করা যেতে পারে-

আরবি-

نويت أن أصليه لله طائلة ركات صلاتيل إشراق متوجها إلى جهتيل كابتش شرفتي الله أكبر.

“নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাকআতাই সালাতিল ইশরাকি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবর।”

ইংরেজী উচ্চারণ- Nawaitu An Usalliyyah Lillahi Ta’ala Rak’atai Salatil Ishraqi Mutawajjihan Ila Jihatil Ka’batish Sharifati Allahu Akbar.

অর্থ- আমি কিবলা মুখী হয়ে মহান আল্লাহ তায়ালার নামে ইশরাকের সালাত আদায় করার জন্য নিজেকে মনস্থ করলাম। আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ। 

ইশরাক নামাযের ফজীলত

ইশরাক নামায আদায় করার ফজীলত অনেক বেশী। এ নিয়ে অনেক গুলো হাদিস উপস্থাপন করা হয়েছে। ইশরাক নামাযের গুরুত্ব কতটা, তা উপলব্ধি করা যায় নিম্নোক্ত হাদিসগুলো দ্বারা-

  • হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আ’নহু-র বর্ণনা অনুযায়ী, প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে মুমিন ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাআতে একত্রুত হয়ে আদায় করবে। এর পর সূর্যোদয়ের  পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত ঐ স্থানে বসেই মহান আল্লাহর জিকির করায় মগ্ন থাকবে। অতঃপর দুই রাকাআত নামাজ আদায় করবে। তার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ হজ ও ওমরার সমপরিমান সওয়াব নির্ধারণ  করা আছে।’ (তিরমিজি) (মিশকাত)

এ থেকে বোঝা যায়, শুধুমাত্র একবার ইশরাক নামায আদায় করাতেই হজ্জ ও ওমরাহর সওয়াব পাওয়া যায়। যা, মহান আল্লাহ তায়ালার বিশাল নিয়ামত।

  •  হযরত আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহু-র বর্ণনা অনুযায়ী, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন, ‘যেই ব্যক্তি এক নামাজের পর অন্য এক নামাজ ধারাবাহিক ভাবে আদায় করে; এবং এর মাঝখানে কোনো প্রকার গুনাহ (সগীরা ও কবীরা) করেনা, অতঃপর তা ইল্লিয়্যুনে লেখা হয়।’ (আবু দাউদ)

ইলিয়্যুন বলতে বোঝায় উচ্চ মর্যাদা। সুতরাং ধারাবাহিক ভাবে সালাত আদায় করার জন্য পজর ও ইশরাক নামাযের দুরত্ব খুবই ছোট। তাই, আমরা সহজেই এই আমল করতে পারি।

  • অন্য এক বর্ণনা অনুযায়ী, ‘সূর্য উদিত হওয়ার আগে আল্লাহ তা’য়ালার জিকির, তাকবীর,  তাহলিল এবং তাহমিদ পাঠ করা আমার কাছে এতটাই প্রিয় যে, ইসমাঈল বংশের দুইজন গোলাম আজাদ থেকেও এটা আমার কাছে অদিক পছন্দনীয়। ‘(মুসনাদে আহমাদ)

ইসামাঈল বংশের দুইজন গোলাম আজাদ করা খুবই মহান রবের কাছে প্রশংসনীয়। আমাূের নবিজী এটার প্রশংসা করেছেন। আর উপরোক্ত হাদীস অনুযায়ী ফজর নামাযের শেষে ইশরাক নামাযের জন্য অপেক্ষা করে জিকির করা, খুবই অধিক পছন্দসই।

মহান আল্লাহ তা’য়ালা এই সালাতের ভেতর অনেক ফজীলত দিয়ে রেখেছেন। আমাদের সকলের উচিত ফজর নামায আদায় করার পরে ইশরাকের সালাত আদায় করা। নবি (সঃ) এই সালাত নিয়ে যেসব গুরুত্বপূর্ণ হাদিস বলেছন, সেগুলোর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারলে, রবকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে, আমরা অবশ্যই ইশরাক নামায আদায় করণে সচেতন হব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here