ডান পাশে কাত হয়ে ঘুমানো

ডান পাশে কাত হয়ে ঘুমানোর বিষয়ে ইসলাম ও বিজ্ঞান উভয়ই গুরুত্বপূর্ন মতামত প্রদান করে। ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে, এটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর একটি সুন্নাহ, যিনি নিজে ডান পাশে কাত হয়ে ঘুমাতেন। এই পদ্ধতিকে শরীরের জন্যও উপকারী বলে বিবেচনা করা হয়। ডান পাশে শোয়া মানুষের অন্তরের ওপর চাপ কমায় এবং পাকস্থলীর স্বাভাবিক কাজকর্ম বজায় রাখে। ইসলামিক অনুশাসনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে, চিকিৎসা বিজ্ঞানও ডান পাশে কাত হয়ে ঘুমানোর কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতার কথা বলে থাকে। নিচে বিজ্ঞান ও ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে এর ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:

ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে: ডান পাশে কাত হয়ে ঘুমানো

ইসলামে ডান পাশে কাত হয়ে ঘুমানোকে সুন্নত হিসেবে গণ্য করা হয়। হাদিসে উল্লেখ রয়েছে যে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) নিজে ডান দিকে কাত হয়ে ঘুমাতেন এবং এই পদ্ধতিতে শোওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

  • হাদিসের প্রমাণ:

আল-বুখারি ও মুসলিমের হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘুমানোর আগে প্রথমে ডান দিকে কাত হয়ে শুতে বলতেন এবং “বিসমিল্লাহ” বলে ঘুমানোর জন্য পরামর্শ দিতেন। এটি কেবল শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য নয়, বরং আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী বলে বিবেচনা করা হয়।

বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে: ডান পাশে কাত হয়ে ঘুমানো

বিজ্ঞান ডান পাশে কাত হয়ে ঘুমানোর অনেক উপকারিতা প্রমাণ করেছে। এখানে কয়েকটি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ তুলে ধরা হলো:

  • হৃদপিণ্ডের উপকারিতা: ডান পাশে শোওয়া হৃদপিণ্ডের উপর চাপ কমায়, কারণ বাম পাশে শোওয়ার তুলনায় ডান পাশে শোওয়ার ফলে হৃদপিণ্ডে চাপ কম পড়ে এবং এটি রক্ত সঞ্চালনে সহায়ক হয়। এতে শ্বাস-প্রশ্বাস সহজ হয় এবং হৃদপিণ্ডের কর্মক্ষমতা উন্নত হয়।
  • অ্যাসিড রিফ্লাক্স ও হজমের সহায়তা: ডান দিকে কাত হয়ে শোওয়া খাবারের হজমে সহায়তা করে, কারণ পাকস্থলীর স্বাভাবিক গঠন অনুযায়ী খাবার নীচের দিকে সঞ্চালিত হয় এবং পেটের অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা গ্যাস্ট্রোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD) এর ঝুঁকি কমে। অ্যাসিড রিফ্লাক্স কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে ডান পাশে শোওয়া সহায়ক বলে বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে।
  • শ্বাসপ্রশ্বাস উন্নত করা: ডান দিকে শোওয়া শ্বাসকষ্ট ও স্লিপ অ্যাপনিয়া কমায়। বাম পাশের শোয়ার তুলনায় এটি শ্বাস-প্রশ্বাসকে সহজ করে এবং ফুসফুসে অতিরিক্ত চাপ পড়ে না।
  • মস্তিষ্কের কার্যকারিতা: ডান পাশে শোওয়া মস্তিষ্কের লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমকে সহায়তা করে, যা শরীরের বর্জ্য পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে। এটি নিউরোলজিক্যাল স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী বলে বিবেচিত হয়।

গর্ভবতী নারীদের জন্য বাম পাশে শোয়াঃ

তবে, অধিকাংশ চিকিৎসকরা গর্ভাবস্থায় হাঁটু বাঁকিয়ে নারীদের বাঁ পাশ ফিরে ঘুমানোর পরামর্শ দেন। এই ঘুমানোর পদ্ধতিকে সবচেয়ে আরামদায়ক এবং “আদর্শ” অবস্থান হিসেবে ধরা হয়। যেহেতু শরীরের ডান দিকে যকৃৎ অবস্থিত, তাই বাঁ দিকে শোওয়ার ফলে যকৃতের উপর চাপ কমে, যা এর কার্যক্ষমতাকে সহজতর করে। এছারাও এটি রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, শ্বাস নিতে সাহায্য করে এবং প্রি-একলাম্পসিয়ার ঝুঁকি কমায় বলে চিকিৎসকরা মনে করেন।

ইসলাম ও বিজ্ঞান উভয়ই ডান পাশে কাত হয়ে ঘুমানোর পক্ষে পরামর্শ দিয়েছে। ইসলামে এটি সুন্নত হিসেবে গণ্য হয়, আর বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এটি শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী প্রমাণিত হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here