গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিড

গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিড একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান যা গর্ভের শিশুর সুস্থ বিকাশে সহায়তা করে। এটি নবজাতকের স্নায়ুতন্ত্রের গঠন ও বিকাশে অপরিহার্য ভূমিকা রাখে। ফলিক এসিডের অভাবে গর্ভের শিশুর বিভিন্ন জন্মগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে। এই পোস্টে, গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিড কেন, এবং সুস্থ ও নিরাপদ গর্ভাবস্থার জন্য ফলিক এসিডের উপকারিতা সম্পর্কে জানুন।

ফলিক এসিড কী?

ফলিক এসিড হল একটি বি ভিটামিন, যা শরীরের কোষ গঠন ও বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি শরীরে প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায় এবং কিছু খাবারে যোগ করা হয়।

গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিড কেন গুরুত্বপূর্ণ?

গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিডের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি নিম্নলিখিত কারণে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি:

  • নিউরাল টিউব ডিফেক্ট প্রতিরোধ: ফলিক এসিড শিশুর মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের সঠিক বিকাশে সাহায্য করে। যদি গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে পর্যাপ্ত ফলিক এসিড না পাওয়া যায়, তাহলে শিশুর মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের জন্মগত ত্রুটি হতে পারে, যেমন স্পাইনা বিফিডা এবং এনসেফেলি।
  • কোষ বৃদ্ধি ও বিকাশ: ফলিক এসিড শরীরের কোষ বৃদ্ধি ও বিকাশে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় শিশুর দ্রুত বৃদ্ধির জন্য এই ভিটামিনটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
  • লাল রক্তকণিকা উৎপাদন: ফলিক এসিড লাল রক্তকণিকা উৎপাদনে সাহায্য করে, যা শিশু এবং মায়ের শরীরে অক্সিজেন পরিবহনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • অন্যান্য জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ: ফলিক এসিড ঠোঁট বা তালুর জন্মগত ত্রুটি এবং হৃদপিণ্ডের ত্রুটিসহ অন্যান্য ত্রুটি প্রতিরোধেও সাহায্য করতে পারে।
  • মাতৃজনিত জটিলতা কমাতে সাহায্যক: গবেষণায় জানা গেছে যে, পর্যাপ্ত ফলিক এসিড গ্রহণ প্রি-একল্যাম্পসিয়া (উচ্চ রক্তচাপজনিত একটি অবস্থা) প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে, যা মা ও সন্তানের জন্য বিপজ্জনক জটিলতার কারণ হতে পারে।

কখন ফলিক এসিড গ্রহণ করা উচিত?

  • গর্ভধারণের পূর্বে: গর্ভধারণের অন্তত এক মাস আগে থেকেই নারীদের ফলিক এসিড সম্পূরক গ্রহণ শুরু করা উচিত।(চিকিৎসকের  পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ সেবন করা কখনই উচিত হবে না।)
  • গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকে: প্রথম ত্রৈমাসিক জুড়ে ফলিক এসিড গ্রহণ অব্যাহত রাখা জরুরি।

ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম:

  • সাধারণ সুপারিশ: বেশিরভাগ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ গর্ভধারণক্ষম বয়সী নারীদের জন্য দৈনিক ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক এসিড গ্রহণের পরামর্শ দেন। (চিকিৎসকের  পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ সেবন করা কখনই উচিত হবে না।)
  • উচ্চ ঝুঁকির ব্যক্তিদের জন্য উচ্চ ডোজ: নিউরাল টিউব ডিফেক্টের ইতিহাস রয়েছে এমন নারীদের বা নির্দিষ্ট কিছু চিকিৎসাগত অবস্থা থাকলে উচ্চ ডোজ প্রয়োজন হতে পারে।

ফলিক এসিডের উৎস:

  • খাদ্য উৎস: শাকসবজি, ডাল, বাদাম, এবং ফোর্টিফাইড সিরিয়াল।
  • পরিপূরক: গর্ভাবস্থায় দৈনন্দিন প্রয়োজন পূরণের জন্য প্রায়ই সম্পূরক আকারে ফলিক এসিড দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যে গমের আটায় ফলিক এসিডঃ

ফলিক এসিডের গুরুত্ব তুলে ধরে বিবিসি এক প্রতিবেদনে বলেছে যে, যুক্তরাজ্য সরকার গমের আটায় ফলিক এসিড যোগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা শিশুদের জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রতি বছর প্রায় ২০০টি নিউরাল টিউব ত্রুটি, যেমন স্পাইনা বিফিডা, প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। খবরটি বিবিসি প্রকাশ করেছে। ফলিক এসিড, ভিটামিন ফোলেটের একটি কৃত্রিম রূপ, শিশুর মস্তিষ্ক, খুলি এবং মেরুদণ্ডের সঠিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে ফলিক এসিডের যথেষ্ট পরিমাণ না পাওয়া শিশুর জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।

উপসংহার:

ফলিক এসিড একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান, বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য। এটি শিশুর স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধি এবং জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধে সাহায্য করে। তাই গর্ভধারণের পরিকল্পনা করার আগে থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ফলিক এসিড গ্রহণ করা উচিত।

মনে রাখবেন: এই তথ্যটি শুধুমাত্র তথ্যের উদ্দেশ্যে এবং এটি কোনও চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়। গর্ভাবস্থায় কোনও ধরনের ওষুধ বা সম্পূরক গ্রহণ করার আগে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন। চিকিৎসকের  পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ সেবন করা কখনই উচিত হবে না ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here