স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে দেশের সকল অনুমোদন ও মানহীন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করার ব্যার্থতাকে কেন বে -আইনী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি বাংলাদেশ মেডিকেল ডেন্টাল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের নিবন্ধন ছাড়া এবং বিএমএ এর অনুমোদন ছাড়া ডাক্তারদের নাম পদবী ও শিক্ষাগত যোগ্যতা ব্যবহার করতে পারবে না বলেও আদেশ দেন আদালত।
নিবন্ধিত চিকিৎসক বা দন্ত চিকিৎসকরা তাদের সাইনবোর্ডে, প্রেসক্রিপশন প্যাড, ভিজিটিং কার্ড ইত্যাদিতে PGT, BHS, FCPS (Part-I), (part-2), MD-(in course), (part-1), (part-2), (থিসিস পর্ব), (last part), course completed (cc), MS-(in course) ইত্যাদি এবং দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রদত্ত ফেলোশিপ এবং প্রশিক্ষণসমূহ যথা FRCP, FRHS, FICA, FICS, FAMS, FIAGP ইত্যাদি উল্লেখ না করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। কারণ এগুলো কোনো স্বীকৃত চিকিৎসা শিক্ষাগত যোগ্যতা নয় এবং বিএমডিসি কর্তৃক স্বীকৃত নয়।
সোমবার জনস্বার্থে করা এক রিটের শুনানি করে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. জেআর খান রবিন। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট শাম্মি আক্তার।
আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি), বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল বিএমএ্যান্ডডিসির প্রেসিডেন্ট , ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ ৬ জনকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে স্বাস্থ্য সচিবসহ সংশ্লিষ্ট ৬ জনের প্রতি আইনি নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জে আর খান (রবিন)।
নোটিশে দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে আইন মোতাবেক বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার প্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয়েছিলো। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ না নিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছিলো নোটিশে। পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় এই রিট আবেদন করা হয়। রিটের শুনানি নিয়ে এই আদেশ দেন আদালত।
পরে আদালত থেকে বেরিয়ে আইনজীবী মো. জে আর খান (রবিন) বলেন, দি মেডিকেল প্রাকটিশনার অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিস (রেগুলেশন) অধ্যাদেশ, ১৯৮২ এর ৮ ধারা অনুযায়ী লাইসেন্স ব্যতীত কোনো প্রাইভেট ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। ৯ ধারা অনুযায়ী শর্তাবলী পূরণ না হলে কর্তৃপক্ষ কোনো প্রাইভেট ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করার অনুমতি প্রদান করবেন না। এ বিধান থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে ব্যাঙের ছাতা মত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। যার অধিকাংশই অনুমোদনহীন, মানহীন ও সেবা প্রদানের চেয়ে টাকা উপার্জনেই মালিকদের উদ্দেশ্যে। আর এ টাকা উপার্জনের মানসিকতায় অনেক সাধারণ মানুষ অপচিকিৎসার শিকার হন।
তিনি বলেন, সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিয়মনীতি না মেনে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচার করানো হয়। এ কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রোগীর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে।
নোটিশে ২০১৬ সালের ২০ জুলাই বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের প্রচারিত সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উল্লেখ করে বলা হয়েছে, নিবন্ধিত চিকিৎসক বা দন্ত চিকিৎসকরা তাদের সাইনবোর্ডে, প্রেসক্রিপশন প্যাড, ভিজিটিং কার্ড ইত্যাদিতে PGT, BHS, FCPS (Part-I), (part-2), MD-(in course), (part-1), (part-2), (থিসিস পর্ব), (last part), course completed (cc), MS-(in course) ইত্যাদি এবং দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রদত্ত ফেলোশিপ এবং প্রশিক্ষণসমূহ যথা FRCP, FRHS, FICA, FICS, FAMS, FIAGP ইত্যাদি উল্লেখ না করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। কারণ এগুলো কোনো স্বীকৃত চিকিৎসা শিক্ষাগত যোগ্যতা নয় এবং বিএমডিসি কর্তৃক স্বীকৃত নয়।
অনেকেই পোষ্ট গ্রাজুয়েশন না করেও “বিশেষজ্ঞ” শব্দ ব্যাবহার করেন। যা জনসাধারণের সাথে প্রতারণার শামিল, বিএমডিসির আইনের পরিপন্থী এবং শাস্তি যোগ্য অপরাধ। কিন্তু অনেক চিকিৎসক ওই নির্দেশ অমান্য করে তাদের ভিজিটিং কার্ড, সাইনবোর্ড, প্রেসক্রিপশন প্যাডে এ সব প্রশিক্ষণের এর নাম উল্লেখ করায় সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হন। অনেক ক্ষেত্রে অপচিকিৎসারও শিকার হন। যা কোনো ভাবেই কাম্য নয়।