বিশ্বব্যাপী মহামারি রূপ নেওয়া করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তাতে আক্রান্তদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া ক্রমেই অসম্ভব হয়ে পড়ছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। অনেক ক্ষেত্রে রোগীদের বয়স ও বাঁচার সম্ভাবনা ভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি করার খবরও পাওয়া গেছে। এই চিত্র দেখা গেছে করোনার উৎপত্তিস্থল হুবেই প্রদেশে।

মহামারির কারণে অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মানের পরেও আক্রান্তদের সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত হওয়ায় রোগীদের বাড়ি পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন চিকিৎসকরা। একই অবস্থা এখন ইতালিতে। অনেক করোনাআক্রান্ত রোগীকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও নির্দেশনা দিয়ে হোম আইসোলেশনে পাঠানো হচ্ছে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুর হার ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ শতাংশ রোগীই কোনো ধরনের চিকিৎসা ছাড়াই সুস্থ হয়ে যায়। এজন্য যেসব দেশে করোনার বিপর্যয় মাত্রাতিরিক্ত সেসব দেশে অনেক করোনাভাইরাসে আক্রান্তকেই হোম আইসোলেশনে পাঠানো হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগীকে হোম আইসোলেশনে পাঠানো হলে পরিবারের সদস্যরা কীভাবে তার পরিচর্যা করবেন? এই বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশনা গুলো হচ্ছে-

১. কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে প্রাথমিকভাবে তার মধ্যে যেসব উপসর্গ বিদ্যমান থাকে তা অনেকটা সহনীয় পর্যায়ের হয়। তবে, ধীরে ধীরে রোগীর অবস্থা খারাপ হতে পারে। এক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি শরীরে ব্যথা অনুভব, বুকে চাপ কিংবা শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হচ্ছে কিনা তা খেয়াল রাখতে হবে। এসব সমস্যা দেখা দিলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে।

২. করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে আলাদা ঘরে রাখতে হবে। তবে এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে, তাকে যে ঘরে রাখা হচ্ছে সে ঘরে যেন পর্যাপ্ত আলো-বাতাস থাকে। তার জন্য আলাদা থালা-বাসন ও বাথরুমের ব্যবস্থা করতে হবে। আলাদা বাথরুমের ব্যবস্থা করা না গেলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি বাথরুম ব্যবহারের পর জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।

৩. প্রয়োজন ছাড়া ওই ব্যক্তির ঘরে প্রবেশ করা যাবে না। এক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি যে ঘরে থাকছেন সে ঘরে ঢোকার সময় হ্যান্ড গ্লাভস ও মাস্ক পড়তে হবে এবং যথা সম্ভব সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। ওই ঘরে প্রবেশের সময় আক্রান্ত ব্যক্তির মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র যেমন-বিছানার চাদর, গামছা, খাবারে বাসনপত্র নির্দিষ্ট স্থানে জীবণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। এ ছাড়াও বাড়িতে পোষ্য প্রাণী যেমন- কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে যেন না আসে তা লক্ষ্য রাখতে হবে।

৪. আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক ওষুধ দিতে হবে। এ ছাড়া হাইড্রেড থাকার জন্য প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে।

৫. হোম আইসোলেশনে থাকার সময় একাকীত্ব দূর করতে এবং রোগীর মনোবল চাঙ্গা রাখার জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা করা জরুরি। এক্ষেত্রে টেলিভিশন ও ইন্টারনেট সংযোগ অত্যন্ত উপযোগী।

৬. আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে করোনাভাইরাসের উপসর্গ চলে যাওয়ার পরেও ৩ থেকে ৭ দিন তাকে হোম আইসোলেশনে থাকতে হতে পারে। চিকিৎসকের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের পরীক্ষায় ফলাফল নেগেটিভ আসলে ওই ব্যক্তির ব্যবহৃত সব জিনিস ফেলে দিতে হবে অথবা ভালোমতো জীবণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।

সফটওয়্যার সল্যুশন কোম্পানি ‘ডারাক্সে’র পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘ওয়ার্ল্ডোমিটারে’ প্রকাশিত তথ্যমতে, চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের ১৯৯টি দেশ ও অঞ্চলে। ভাইরাসটির সংক্রমণে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৩০ হাজার ৮৭৯ জন। সারা বিশ্বে ৬ লাখ ৬৩ হাজার ৭৪০ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here