করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সৃষ্ট অর্থনৈতিক সমস্যা সফলভাবে মোকাবলা করে চলমান উন্নয়ন অব্যাহত এবং উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেট আজ সংসদে পাস হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে উত্থাপন করলে কণ্ঠভোটে সর্বসম্মতিক্রমে নির্দিষ্টকরণ বিল, ২০২০ অনুমোদিত হয়।
গত ১১ জুন জাতীয় সংসদে ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যত পথপরিক্রমা’ শ্লোগান সম্বলিত এ বাজেট পেশ করেন। তিনি সেদিন পাওয়ার পয়েন্টে প্রস্তাবিত বাজেটের গুরুত্বপূর্ণ দিক, সরকারের পদক্ষেপ এবং বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ প্রস্তাব তুলে ধরেন।
আজ বাজেট পাসের প্রক্রিয়ায় মন্ত্রীগণ সংশ্লি¬ষ্ট মন্ত্রণালয়ের ব্যয় নির্বাহের যৌক্তিকতা তুলে ধরে মোট ৫৯ টি মঞ্জুরি দাবি সংসদে উত্থাপন করেন। এই মঞ্জুরি দাবিগুলো সংসদে কণ্ঠভোটে অনুমোদিত হয়।
এরআগে, এসব দাবির মধ্যে মঞ্জুরি দাবির যৌক্তিকতায় নিয়ে বিরোধীদলের সংসদ সদস্য মোট ৪২১টি ছাঁটাই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো পরে কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
বিরোধীদলের এবং বিএনপির ৯ জন সংসদ সদস্য ছাঁটাই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তার হলেন- কাজী ফিরোজ রশীদ, মজিবুল হক, ফখরুল ইমাম, পীর ফজলুর রহমান, শামীম হায়দার পাটোয়ারী লিয়াকত হোসেন খোকা, রওশন আরা মান্নান, হারুনুর রশীদ ও রুমিন ফারহানা।
তারা স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ও আইন, বিচার ও সংদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় খাতে ২টি মঞ্জুরি দাবিতে আনীত ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করেন।
পরে স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী মধ্যাহ্নভোজের বিরতি না দিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ দাবি পাসের প্রক্রিয়া দ্রুত করতে গিলোটিন প্রয়োগ করেন।
সংসদে বিলটি পাস হওয়ার সময় বিরোধী ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা সভায় উপস্থিত থাকলেও বিল পাসের বিরুদ্ধে কোনো আওয়াজ তোলেননি।
বাজেটে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং এনবিআর বহির্ভূত সূত্র থেকে কর রাজস্ব ধরা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। কর বহির্ভুত খাত থেকে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা।
বাজেটে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬২ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে আবর্তক ব্যয় ৩ লাখ ১১ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ বাবদ ৫৮ হাজার ২৫৩ কোটি ও ৫ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা, বৈদেশিক ঋণের সুদ বাবদ ৩৬ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা।
বাজেটে সামগ্রিক বাজেট ঘাটতি ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা দেখানো হয়েছে, যা জিডিপির ৬ শতাংশ। এ ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক সূত্র থেকে ৭৬ হাজার ৪ কোটি টাকা, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা আহরণ করা হবে। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা এবং ব্যাংক বহির্ভূত উৎস থেকে ২৫ হাজার ৩ কোটি টাকা সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য খাত থেকে ২৫ হাজার ৩ কোটি টাকা সংস্থানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৮.২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৫.৪ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।