রবিচন্দ্রন অশ্বিন, ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সেরা স্পিনার, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তার এই বিদায়ে ক্রিকেটপ্রেমীরা মর্মাহত। বছরের পর বছর তিনি ভারতীয় দলের স্পিন বিভাগকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। তার স্পিন, তার ব্যাটিং, তার ফিল্ডিং, সবকিছুই ছিল অসাধারণ।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলাঃ
২০১০ সালে হারারেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেক ঘটে অশ্বিনের। এরপর ২০১১ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলে ছিলেন তিনি, যদিও সেখানে হরভজন সিংয়ের ছায়ায় থেকে সুযোগ কম পেয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে অশ্বিন ছিলেন ভারতীয় দলের অন্যতম ভরসা। আট ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়ে সেমিফাইনাল পর্যন্ত যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও অশ্বিনের নৈপুণ্যের ছাপ অমলিন। ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তার ১১ রানে ৪ উইকেটের পারফরম্যান্স এখনো স্মরণীয়। পুরো টুর্নামেন্টে ১১ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি, যদিও ফাইনালে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে ভারতের শিরোপা জয়ের স্বপ্ন পূরণ হয়নি।
Jai Hind 🇮🇳. pic.twitter.com/Vt4ZdvDEDX
— Ashwin 🇮🇳 🧢 (@ashwinnravi99) December 18, 2024
টেস্ট ক্রিকেটের নায়ক
টেস্ট ক্রিকেটে অশ্বিনের অবদান ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে অনন্য। ৫৩৭ উইকেট নিয়ে তিনি ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি, অনিল কুম্বলের পরে। ২৪ গড়ে এই উইকেট সংগ্রহের পথে রয়েছে ৩৭টি পাঁচ উইকেটের কৃতিত্ব। এমনকি মাইলফলক গড়ার দিক থেকে তিনি বিশ্ব ক্রিকেটেও নিজের আলাদা জায়গা তৈরি করেছেন।
প্রথম ১৬ টেস্টেই ৯টি পাঁচ উইকেটের কৃতিত্ব অর্জন করা অশ্বিন দ্রুততম বোলার হিসেবে ৩০০ উইকেট শিকার করেন। এরপর মাইলফলক ছুঁয়েছেন আরও একটি—মুত্তিয়া মুরলিধরনের পরে সবচেয়ে কম ম্যাচে ৪০০ টেস্ট উইকেট নেওয়ার রেকর্ড।
২০১৬-১৭ মৌসুমে তিনি নিজের ক্যারিয়ারের শীর্ষ ফর্মে ছিলেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচে ২৭ উইকেট, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচে ২৮ উইকেট, এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চার ম্যাচে ২১ উইকেট নিয়ে গোটা মৌসুমে প্রতিপক্ষের ব্যাটিং লাইনআপকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন।
আবেগঘন বিদায়
অবসরের ঘোষণা দিতে গিয়ে অশ্বিন বলেন, “ভারতের ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সব সংস্করণে এটাই আমার শেষ দিন। আমার মনে হয়েছে ক্রিকেটার হিসেবে দলের জন্য কিছু দেওয়ার খুব সামান্যই বাকি আছে। যা অবশিষ্ট আছে, তা ক্লাব পর্যায়ে দেখাতে চাই।”
অশ্বিন তার ক্রিকেটীয় যাত্রার জন্য বিসিসিআই, সতীর্থ এবং কোচদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, চেতেশ্বর পূজারা এবং অজিঙ্কা রাহানের নাম, যারা তার বলে ক্যাচ নিয়ে বহু উইকেট শিকার করতে সাহায্য করেছেন।
একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি
অশ্বিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভারতের হয়ে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ২৮৭ ম্যাচে ৭৬৫ উইকেট নিয়েছেন। ব্যাট হাতেও তার অবদান উল্লেখযোগ্য—৪৩৯৪ রান এবং টেস্টে ছয়টি সেঞ্চুরি। বর্তমান আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ে তিনি বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ অলরাউন্ডার। ভারতের জার্সি গায়ে টেস্টে ৫৩৭ উইকেট নিয়ে অশ্বিন তার সমসাময়িক ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি।
অ্যাডিলেডে দিবারাত্রির গোলাপি বলের টেস্টই ভারতের জার্সিতে তার শেষ ম্যাচ হয়ে রইল। ব্রিসবেনে তার ড্রেসিংরুমের আবেগঘন মুহূর্ত থেকে সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা—সবকিছুই ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।
অশ্বিনের বিদায় কেবল একজন ক্রিকেটারের অবসর নয়, বরং ভারতীয় ক্রিকেটের এক উজ্জ্বল অধ্যায়ের সমাপ্তি। ক্রিকেটের প্রতি তার নিবেদন, নৈপুণ্য, এবং স্মৃতি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।