এশিয়া কাপের শিরোপা জয় করেছে বাংলাদেশ
Photo Credit: BCB

দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতকে ৫৯ রানে হারিয়ে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল টানা দ্বিতীয়বারের মতো এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট মাথায় তুলেছে। গত বছর সংযুক্ত আরব আমিরাতকে হারিয়ে প্রথমবার এই শিরোপা জেতার পর এবার ভারতকে পরাজিত করে বাংলাদেশি যুবরা তাদের জয়যাত্রা অব্যাহত রেখেছে।

টসে হেরে বাংলাদেশের ব্যাটিং:

দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের ফাইনালে টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। শুরুতেই ধীরগতির ইনিংস খেলে দুই ওপেনার জাওয়াদ আবরার ও কালাম সিদ্দিকি ৬ ওভারে মাত্র ১৭ রান সংগ্রহ করেন। তবে সপ্তম ওভারের প্রথম বলেই মাত্র ১ রান করে সাজঘরে ফিরতে হয় কালামকে।

এরপর ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে না পারায় চাপ বাড়তে থাকে বাংলাদেশের ওপর। আবরার ২০ ও অধিনায়ক আজিজুল হাকিম ১৬ রান করে আউট হলে বাংলাদেশ বড় স্কোর গড়তে ব্যর্থ হয়।

৬৬ রানে ৩ উইকেট পতনের পর মোহাম্মদ শিহাব জেমস ও রিজান হোসেনের হাফ-সেঞ্চুরির জুটিতে দলীয় স্কোর ১০০ অতিক্রম করে। জেমস ৬৭ বলে ৪০ রান করেন, যেখানে ছিল ৩টি চারের পাশাপাশি ১টি ছক্কা। তবে জেমস আউট হওয়ার পরই আবারও ব্যাটিং ধসে পড়ে বাংলাদেশ।

তবে রিজান ও উইকেটরক্ষক ফরিদ হাসানের লড়াকু ইনিংস কিছুটা হলেও দলের স্কোরকে সম্মানজনক জায়গায় নিয়ে যায়। রিজান ৬৫ বলে ৪৭ রান করেন, আর ফরিদ করেন ৩৯ রান। তাদের ইনিংসের ওপর ভর করেই ৪৯.১ ওভারে বাংলাদেশ গড়ে ১৯৮ রানের সংগ্রহ।

ভারতের বোলারদের মধ্যে যুধাজিত গুহ, চেতন শর্মা এবং হার্ডিক রাজ প্রত্যেকে ২টি করে উইকেট নেন। ফাইনালের উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে এই রান নিয়েই লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেয় বাংলাদেশ।

ভারতের ব্যাটিংয়ে বিপর্যয়ঃ

১৯৯ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা যেন একের পর এক ধসে পড়তে থাকল। প্রথম ওভারেই আয়ুশ মার্থা ১ রান করে বিদায় নেওয়ার পর বৈভব সূর্যবংশীও ৯ রান করে দ্রুত ফিরে যান। মনে হচ্ছিল, ভারতীয় ইনিংসের ভিত্তিই কাঁপতে শুরু করেছে।

মিডল অর্ডারেও কোনো স্থিতিশীলতা আনা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশি বোলাররা যেন একের পর এক ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের উইকেটের দিকে হেঁচড়ে দিচ্ছিল। বিশেষ করে, ইকবাল হোসেন ইমনের বোলিং ছিল অত্যন্ত কার্যকর। ২৩তম ওভারে যখন স্কোরবোর্ডে মাত্র ৮১ রানে ৬ উইকেটের খবর দেখা গেল, তখন ভারতীয় শিবিরে হতাশার ছায়া নেমে আসে। জয়ের আশা যেন এক মুহূর্তে ম্লান হয়ে গেল।

অধিনায়ক মোহাম্মদ আমান কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলেও, তিনিও মাত্র ২৬ রান করে আউট হয়ে যান। শেষ পর্যন্ত, ভারতীয় ইনিংস মাত্র ৩৫.২ ওভারে ১৩৯ রানে গুটিয়ে যায়। হার্দিক রাজ ২৪ এবং চেতন শর্মা ১০ রান করে কিছুটা লড়াই চালিয়েছিলেন, কিন্তু তাদের চেষ্টা সফল হয়নি।

ফাইনালের নায়ক পেসার ইমনঃ

বাংলাদেশের জয়ের পেছনে ইমনের অবদান ছিল অসাধারণ। মাত্র ২৪ রান দিয়ে তিনি ৩টি মূল্যবান উইকেট নিয়ে বিপক্ষের ব্যাটিংকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেন। অধিনায়ক হাকিমও মাত্র ৮ রান দিয়ে ৩টি উইকেট নিয়ে দলকে শক্তিশালী সমর্থন দেন। ফাহাদ ২টি, আর মারুফ ও রিজান ১টি করে উইকেট নিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখেন। তবে, ফাইনালের ম্যাচ সেরা হিসেবে নির্বাচিত হন ইমন। তার অসাধারণ বোলিং পারফরম্যান্সের জন্য তিনি পুরো টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও জিতে নেন। ১৩টি উইকেট নিয়ে তিনি নিজেকে প্রমাণ করেছেন টুর্নামেন্টের সেরা পেসার হিসেবে।

খেলোয়াড়দেশবিভাগপদক/অবদান
মোহাম্মদ ইকবাল হাসান ইমনবাংলাদেশটুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়
মোহাম্মদ ইকবাল হাসান ইমনবাংলাদেশম্যাচ সেরা খেলোয়াড়৩/২৪ (৭) এবং ১ (২)
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯বাংলাদেশব্যাটিং১৯৮ (৪৯.১)
রিজান হোসেনবাংলাদেশব্যাটিং৪৭ (৬৫)
যুধাজিত গুহভারতবোলিং২/২৯ (৯.১)
মোহাম্মদ শিহাব জেমসবাংলাদেশব্যাটিং৪০ (৬৭)
হার্দিক রাজভারতবোলিং২/৪১ (১০)
ফারিদ হাসানবাংলাদেশব্যাটিং৩৯ (৪৯)
চেতন শর্মাভারতবোলিং২/৪৮ (১০)
ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ভারতব্যাটিং১৩৯ (৩৫.২)
মোহাম্মদ আমানভারতব্যাটিং২৬ (৬৫)
আজিজুল হাকিম তামিমবাংলাদেশবোলিং৩/৮ (২.২)
হার্দিক রাজভারতব্যাটিং২৪ (২১)
মোহাম্মদ ইকবাল হাসান ইমনবাংলাদেশবোলিং৩/২৪ (৭)
কার্তিকেয়া কেপিভারতব্যাটিং২১ (৪৩)
আল ফাহাদবাংলাদেশবোলিং২/৩৪ (৮)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here