রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানকে ৬ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ। এই জয়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো পাকিস্তানকে তাদের নিজস্ব মাঠে ২-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করেছে।
১৮৫ রানের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমে বাংলাদেশ ৪ উইকেট হারিয়েই জয়ের পতাকা উড়িয়েছে। সাকিব আল হাসান ১৯ রান এবং মুশফিকুর রহিম ২২ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জয় এনে দিয়েছেন।
Bangladesh Makes History💥🇧🇩
First-ever test series win against Pakistan. Bangladesh 2- Pakistan 0. 👏#BCB #Cricket #BDCricket #Bangladesh #PAKvBAN #WTC25 pic.twitter.com/x1AxqilxCh— Bangladesh Cricket (@BCBtigers) September 3, 2024
বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসঃ টেস্ট জয়
বাংলাদেশ দল ১৮৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে খুব সহজেই জয়ের পথে এগিয়ে যায়। ওপেনার জাকির হাসান এবং সাদমান ইসলাম দারুণ শুরু করে ৫৮ রানের জুটি গড়েন। জাকির ৩৯ বলে ৪০ রান এবং সাদমান ২৪ রান করে দলকে ভালো একটা জায়গায় নিয়ে যান। এরপর অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ৩৮ রান এবং সাবেক অধিনায়ক মুমিনুল হক ৩৪ রান করে দলকে জয়ের আরও কাছে নিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত মাঠে থেকে মুশফিকুর রহিম (২২) এবং সাকিব আল হাসান (২১) মিলে বাংলাদেশকে জয় এনে দেন।
পাকিস্তানের প্রথম ইনিংস
টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হাসান পাকিস্তানকে তাঁদের প্রথম ইনিংসে ২৭৪ রানে অলআউট করে। বল হাতে মেহদী হাসান মিরাজ ৫ উইকেট এবং তাসকিন আহমেদ ৩ উইকেট নিয়ে দলকে এগিয়ে রাখেন। পাকিস্তানের পক্ষে সাইম আইয়ুব ৫৮, শান মাসুদ ৫৭ এবং আগা সালমান ৫৪ রান করেন।
বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস
বাংলাদেশ তাঁদের প্রথম ইন্নিংসে ২৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়ে। কিন্তু লিটন দাস এবং মেহদী মিরাজের ১৬৫ রানের জুটি বাংলাদেশকে ফলোঅন থেকে বাঁচিয়ে দেয়। শেষ পর্যন্ত লিটন দাসের ১৩৮ এবং মিরাজ ৭৮ রানের সুবাদে পাকিস্তানের চেয়ে ১২ রান পিছিয়ে ২৬২ রান সংগ্রহ করে। এই রানের সুবাদে ম্যাচ সেরা হন লিটন দাস ও সিরিজ সেরা হন মেহেদি হাসান মিরাজ।
এই ইনিংসে বল হাতে পাকিস্তানের খুররম শেহজাদ ৬ উইকেট নেন। এছাড়া হামজা ও সালমান দুটি করে উইকেট নেন।
পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংস
১২ রানকে হাতে নিয়ে খলতে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের পেসাররা দারুণ বোলিং করে পাকিস্তানকে ১৭২ রানে গুটিয়ে দেয়। হাসান মাহমুদ ৫ উইকেট এবং নাহিদ রানা ৪ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের রানের গতি আটকে দেয়।
ইনিংসের শুরুতে দ্বিতীয় ওভারে হাসান মাহমুদের বলে আবদুল্লাহ শফিক ৩ রান ও খুররম শেহজাদ ০ রানে আউট হন। তবে, পাকিস্তানের রিজওয়ান ৪৩ ও সালমান ৪৭ রান করেন। এছাড়া অধিনায়ক শান মাসুদ ২৮ ও সাইম আইয়ুব ২০ রান করলেও অন্যরা কেও ভাল রান করতে পারেনি।
বাংলাদেশের জয়ের পেছনে কারা কারা?
১৮৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে বাংলাদেশ সহজেই জয়ের পতাকা উড়িয়েছে। দলের ওপেনাররা, জাকির হোসেন ও সাদমান ইসলাম, দারুণ শুরু করে দলকে ভালো একটা জায়গায় নিয়ে যান। এই দুজন মিলে ৫৮ রানের জুটি গড়েন। জাকির ৪০ রান করে দলের জন্য ভালো শুরু করেন, আর সাদমান ২৪ রান করে তার সঙ্গ দেন।
এরপর দায়িত্ব নেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল হক। এই দুজন মিলে দলকে আরও এগিয়ে নিয়ে যান। নাজমুল ৩৮ রান করে দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন। মুমিনুলও ৩৪ রান করে দলের জন্য ভালো কাজ করেন। দলীয় ১৫৩ রানে মুমিনুল ৭১ বলে ৩৪ রান করে আউট হলে, অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান (২১) ও মুশফিকুর রহিম (২২) মিলে অপরাজিত থেকে জয় ম্যাচ জিতে মাঠ ছাড়েন।
এই জয়ের ফলে বাংলাদেশ বিদেশের মাটিতে দ্বিতীয়বার টেস্ট সিরিজ জয়ের গৌরব অর্জন করেছে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের স্বর্ণ অধ্যায়:
বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। টেস্ট ক্রিকেটে অন্যতম শক্তিশালী দল পাকিস্তানকে তাদের নিজস্ব মাটিতে ২-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করে টাইগার বাহিনী একটি অবিশ্বাস্য সাফল্য অর্জন করেছে। প্রথম টেস্টে মুশফিকের ১৯১ রানে ভর ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে জয়লাভের পর, দ্বিতীয় টেস্টেও্র লিটন দাসের সেঞ্চুরি ও হাসান মাহমুদের ৫ উইকেটে বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয় পেয়ে সিরিজ নিজের করে নেয়।
এই জয় বাংলাদেশের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এটি দেশের বাইরে দ্বিতীয়বার কোনো দলকে হোয়াইটওয়াশ করার ঘটনা। এর আগে ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে বাংলাদেশ একটি টেস্ট সিরিজ জিতেছিল। তবে সেই সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলটি পূর্ণ শক্তির ছিল না। এই বিবেচনায় পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করা আরও বড় একটি অর্জন।
এই সিরিজ জয়ের আরও একটি বিশেষ দিক হল প্রথম টেস্টে ১০ উইকেটের জয়। এটি বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা।
সংক্ষেপে বলতে গেলে, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে এক ইতিহাস গড়েছে। এই জয় বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয় এবং বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে উন্নতি
বাংলাদেশের এই ঐতিহাসিক জয় শুধু দেশের ক্রিকেটকে নয়, বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের টেবিলকেও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। এই জয়ের ফলে বাংলাদেশ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট টেবিলে দুই ধাপ এগিয়ে চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে। ৬ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ ৩টি জয় এবং ৩টি হারের সাথে ৪৫.৮৩ শতাংশ পয়েন্ট অর্জন করেছে।
অন্যদিকে, এই টেস্ট হারার পরও পাকিস্তান টেবিলের অষ্টম স্থানে রয়ে গেছে। ৭ ম্যাচ খেলে পাকিস্তান ২টি জয় এবং ৫টি হারের সাথে মাত্র ১৯.০৫ শতাংশ পয়েন্ট অর্জন করেছে।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শীর্ষে এখনও ভারত এবং অস্ট্রেলিয়া রয়েছে।
দল | খেলা | জয় | হার | ড্র | পয়েন্ট কাটা | পয়েন্ট | ম্যাচ জয়ী পয়েন্ট |
ভারত | ৯ | ৬ | ২ | ১ | ২ | ৭৪ | ৬8.৫২ |
অস্ট্রেলিয়া | ১২ | 8 | ৩ | ১ | ১০ | ৯০ | ৬২.৫০ |
নিউজিল্যান্ড | ৬ | ৩ | ৩ | ০ | ০ | ৩৬ | ৫০.০০ |
বাংলাদেশ | ৬ | ৩ | ৩ | ০ | ৩ | ৩৩ | ৪৫.8৩ |
ইংল্যান্ড | ১৫ | 8 | ৬ | ১ | ১৯ | 8১ | ৪৫.০০ |
দক্ষিণ আফ্রিকা | ৬ | ২ | ৩ | ১ | ০ | ২8 | ৩8.8৯ |
শ্রীলঙ্কা | ৬ | ২ | ৪ | ০ | ০ | ২৪ | ৩৩.৩৩ |
পাকিস্তান | ৭ | ২ | ৫ | ০ | 8 | ১৬ | ১৯.০৫ |
ওয়েস্ট ইন্ডিজ | ৯ | ১ | ৬ | ২ | ০ | ২০ | ১8.৫২ |
বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান দ্বিতীয় টেস্ট একাদশঃ
পাকিস্তান একাদশ: সাইম আইয়ুব, আবদুল্লাহ শফিক, শান মাসুদ (অধিনায়ক), বাবর আজম, সৌদ শাকিল, মোহাম্মদ রিজওয়ান (উইকেটকিপার), আগা সালমান, খুররম শেহজাদ, মির হামজা, আবরার আহমেদ ও মোহাম্মদ আলী।
বাংলাদেশ একাদশ: সাদমান ইসলাম, জাকির হাসান, নাজমুল হোসেন (অধিনায়ক), মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস (সহ–অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ, হাসান মাহমুদ, তাসকিন আহমেদ ও নাহিদ রানা।
রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম দিন খেলা হয়নিঃ
পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত টেস্টের প্রথম দিন বৃষ্টির কারণে সম্পূর্ণ বাতিল হয়েছে। দুপুর ১২টার একটু পরই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, প্রথম দিন খেলা হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম ছিল। বৃষ্টির কারণে টসও হতে পারেনি এবং মাঠ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও সফল হওয়া যায়নি।
Pakistan 🆚 Bangladesh | 2nd Test | Day 05
Bangladesh won the match by 6 wickets and the series 2-0 (2) 💥👏PC: PCB#BCB #Cricket #BDCricket #Bangladesh #PAKvBAN #WTC25 pic.twitter.com/oyvyXZH1BV
— Bangladesh Cricket (@BCBtigers) September 3, 2024
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
পাকিস্তান প্রথম ইনিংস : ২৭৪/১০, ৮৫.১ ওভার (আইয়ুব ৫৮, মাসুদ ৫৭, সালমান ৫৪, মিরাজ ৫/৬১, তাসকিন ৩/৫৭)।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ২৬২/১০, ৭৮.৪ ওভার (লিটন ১৩৮, মিরাজ ৭৮, শাহজাদ ৬/৯০)।
পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংস : ১৭২/১০, ৪৬.৪ ওভার (সালমান ৪৭*, রিজওয়ান ৪৩, হাসান ৫/৪৩, রানা ৪/৪৪)।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস : ১৮৫/৪, ৫৬ ওভার (জাকির ৪০, শান্ত ৩৮, মোমিনুল ৩৪, মুশফিক ২২*, সাকিব ২১ *, সালমান ১/১৪)।
ফল : বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী
সিরিজ : দুই ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জয়ী বাংলাদেশ
ম্যাচ সেরা : লিটন দাস (বাংলাদেশ)
সিরিজ সেরা : মেহেদি হাসান মিরাজ (বাংলাদেশ)