আজ বেলা ১১টায় দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল একযোগে প্রকাশ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা নিজের ফলাফল অনলাইনে, শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে এবং নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে জানতে পারবে। এছাড়াও, আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি ফলাফলের একটি বিস্তারিত সারসংক্ষেপ প্রকাশ করেছে।
আজ প্রকাশিত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে মেয়েরা আবারও দাপট দেখিয়েছে। মোট ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে, যাদের মধ্যে ৮০ হাজার ৯৩৩ জন মেয়ে। ছেলেদের চেয়ে প্রায় ১৬ হাজার বেশি মেয়ে জিপিএ-৫ অর্জন করেছে।
গত বছরের তুলনায় এবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ৫৩ হাজারেরও বেশি। তবে, গড় পাসের হার সামান্য কমে দাঁড়িয়েছে ৭৭.৭৮ শতাংশে। গত বছর এই হার ছিল ৭৮.৬৪ শতাংশ।
শিক্ষাবোর্ড অনুযায়ী পাসের হার :
মাদরাসা বোর্ড: ৯৩.৪০%
কারিগরি বোর্ড: ৮৮.০৯%
সিলেট বোর্ড: ৮৫.৩৯%
বরিশাল বোর্ড: ৮১.৮৫%
রাজশাহী বোর্ড: ৮১.২৪%
ঢাকা বোর্ড: ৭৯.২১%
দিনাজপুর বোর্ড: ৭৭.৫৬%
চট্টগ্রাম বোর্ড: ৭০.৩২%
কুমিল্লা বোর্ড: ৭১.১৫%
যশোর বোর্ড: ৬৪.২৯%
ময়মনসিংহ বোর্ড: ৬৩.২২%
উপরের তালিকা থেকে স্পষ্ট যে, মাদরাসা বোর্ড সর্বোচ্চ পাসের হার অর্জন করেছে এবং ময়মনসিংহ বোর্ড সর্বনিম্ন পাসের হার অর্জন করেছে।
এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা (বোর্ডভিত্তিক)
বোর্ড | জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা |
ঢাকা | ৪৮,৫৪৮ |
রাজশাহী | ২৪,৯০২ |
কুমিল্লা | ৭,৯২২ |
যশোর | ৯,৭৪৯ |
চট্টগ্রাম | ১০,২৬৯ |
বরিশাল | ৪,১৬৭ |
সিলেট | ৬,৬৯৮ |
দিনাজপুর | ১৪,২৯৫ |
ময়মনসিংহ | ৪,৮২৬ |
মোট | ৫৩,৩১৬ |
মোট পরীক্ষার্থী:
মোট পরীক্ষার্থী: ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ জন
মোট পাস: ১০ লাখ ৩২ হাজার ৪৫৮ জন
ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা ৪.৩৪% বেশি পাস
এই ফলাফল থেকে বোঝা যায়, মেয়েরা শিক্ষায় দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে। তবে, পাসের হার সামান্য কমে যাওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা প্রয়োজন। বিভিন্ন বোর্ডের ফলাফলের মধ্যে যে বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়, তার কারণ খুঁজে বের করে প্রতিকার করা জরুরি।
আলিম পরীক্ষায় অসাধারণ সাফল্য!
এ বছর মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের আলিম পরীক্ষায় অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী, পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৯৩.৪০ শতাংশে। এটি গত কয়েক বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য একটি বৃদ্ধি। ২০২৩ সালে পাসের হার ছিল ৯০.৭৫ শতাংশ এবং ২০২২ সালে ছিল ৯২.৫৬ শতাংশ।
এ বছর সারা দেশের ২ হাজার ৬৮৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে মোট ৮৫ হাজার ৫৫৮ জন শিক্ষার্থী আলিম পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। তাদের মধ্যে ৭৯ হাজার ৯০৯ জন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। উত্তীর্ণদের মধ্যে ৪২ হাজার ৭৯৩ জন ছাত্র এবং ৩৭ হাজার ১১৬ জন ছাত্রী রয়েছে।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ফলাফলে উজ্জ্বল সাফল্যঃ
আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত এইচএসসি ভোকেশনাল, বিএম এবং ডিপ্লোমা ইন কমার্স পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এবারের পরীক্ষায় মোট ১ লাখ ১৪ হাজার ৩৮২ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে ৮২ হাজার ৭৫৫ জন ছাত্র এবং ৩১ হাজার ৬২৭ জন ছাত্রী রয়েছেন।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল, এবার ৪ হাজার ৯২২ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ অর্জন করেছেন। এর মধ্যে ১ হাজার ৫৩০ জন ছাত্র এবং ৩ হাজার ৩৯২ জন ছাত্রী এই অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছেন।
এইচএসসি পরীক্ষা: বিক্ষোভ, স্থগিতকরণ ও বিষয় ম্যাপিংঃ
ঢাকা, ২ মে: গত ৩০ জুন শুরু হওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেরে ব্যাহত হয়ে পড়ে। সাতটি পরীক্ষা শেষে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও আন্দোলনকারীরা সচিবালয়ে বিক্ষোভ করায় পরীক্ষা বাতিল হয়।
এই পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করে। যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে, সেগুলোর ফলাফল নিয়মিতভাবে প্রকাশ করা হবে। কিন্তু যেসব বিষয়ের পরীক্ষা বাতিল হয়েছে, সেগুলোর ফলাফল এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বিষয় ম্যাপিং করে নির্ধারণ করা হবে।
বিষয় ম্যাপিং কী?
বিষয় ম্যাপিং এর অর্থ হল, একজন পরীক্ষার্থী যদি এসএসসিতে কোন বিষয়ে নির্দিষ্ট নম্বর পেয়ে থাকে এবং সেই বিষয়টি এইচএসসিতেও থাকে, তাহলে এইচএসসিতে সেই বিষয়ে তার এসএসসি-তে প্রাপ্ত পুরো নম্বরই বিবেচনা করা হবে। আর যদি এসএসসি ও এইচএসসিতে বিষয়গুলো ভিন্ন হয়, তাহলে একটি নির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে নম্বর নির্ধারণ করা হবে।
এই সিদ্ধান্তের প্রভাব:
এই সিদ্ধান্তের ফলে অনেক শিক্ষার্থীর ফলাফল প্রভাবিত হতে পারে। কারণ, অনেকে হয়তো এইচএসসিতে এসএসসির তুলনায় ভালো করতে পারতো। আবার অনেকের ক্ষেত্রে এসএসসি-র ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসির ফলাফল নির্ধারণ করা হওয়ায় তাদের জন্য ক্ষতি হতে পারে।
শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া:
এই সিদ্ধান্ত নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকে এই সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক বলে মনে করছেন এবং পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। আবার অনেকে এই সিদ্ধান্তকে গ্রহণযোগ্য মনে করছেন।
শিক্ষাবিদদের মতামত:
শিক্ষাবিদরাও এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভিন্ন মতামত দিচ্ছেন। কেউ কেউ মনে করেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে শিক্ষার্থীদের অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে। আবার কেউ কেউ মনে করেন, এই পরিস্থিতিতে এটিই একমাত্র সমাধান।