আজ থেকে দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে শুরু হচ্ছে গণটিকা কার্যক্রম। আগামী ১২ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে ক্যাম্পেইন চালিয়ে ৩২ লাখ মানুষকে করোনা টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হবে। ছয় দিনে পর্যায়ক্রমে টিকা পাবেন গ্রাম, শহর ও দুর্গম এলাকার মানুষ।
মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদেরও টিকা দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর মহাখালীতে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস) প্রাঙ্গণে ‘কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইন-২০২১’ উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকার সম্প্রসারিত আকারে আজ থেকে দেশব্যাপী ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সময় ২৫ বছর ও তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠী; অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়স্ক জনগোষ্ঠী, নারী ও শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগোষ্ঠীকে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনা হবে।
তিনি আরও জানান, এই ক্যাম্পেনের আওতায় সারা দেশে চার হাজার ৬০০টি ইউনিয়ন, এক হাজার ৫৪টি পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশন এলাকার ৪৩৩টি ওয়ার্ডে ৩২ হাজার ৭০৬ জন টিকাদানকারী এবং ৪৮ হাজার ৪৫৯ জন স্বেচ্ছাসেবী কাজ করবেন। আজ দেশের সব ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন এলাকায় ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইন শুরু হবে। আগামী ৮ ও ৯ আগস্ট ইউনিয়ন ও পৌরসভার বাদ পড়া ওয়ার্ডে এবং ৭ থেকে ৯ আগস্ট সিটি করপোরেশন এলাকায় টিকাদান কর্মসূচি চলবে। দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৮ ও ৯ আগস্ট ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম চালু থাকবে। এছাড়া ১০ থেকে ১২ আগস্ট জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের জনগোষ্ঠীর ৫৫ বছর বয়সিদের মধ্যে কোভিড-১৯ টিকাদান কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
টিকা নেওয়ার বয়সসীমা ১৮ থেকে কেন আবার ২৫ বছর করা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৮ বছর বয়সি অনেকের এনআইডি নেই। আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি, যদি এনআইডি ছাড়া ১৮ বছর বয়সিদের টিকার আওতায় আনতে যাই, মাঠে যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে সেটাকে আমরা সামাল দিতে পারব না। সেজন্য অনেক আলোচনা করে আমরা ঠিক করেছি টিকাদানের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ২৫ বছর হবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার সিটি করপোরেশন এলাকায় ৭-৯ আগস্ট ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন কার্যক্রম চলমান রাখা যাবে বলে জানায় অধিদপ্তর। এছাড়া এই তিনদিন প্রয়োজনে দুর্গম এলাকায় স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা যেতে পারে বলেও জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার অধিদপ্তরের পরিচালক ও কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক স্বাক্ষরিত এ নির্দেশনাগুলো সংশ্লিষ্টদের পাঠানো হয়েছে।
এ সময় জানানো হয়, দেশে এ পর্যন্ত এক কোটি ৯ হাজার ৯৫৩ জনকে টিকার প্রথম ডোজ এবং ৪৪ লাখ ১৬ হাজার ১৩১ জনকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে। নিবন্ধন করেছে এক কোটি ৭৭ লাখ ৯৫ হাজার। ঢাকায় যারা নিবন্ধন করছেন তারা ২০ থেকে ২৫ দিন পরে টিকার এসএমএস পাচ্ছেন, কারণ ওই সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের পক্ষে একসঙ্গে এত মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এমন সময়ে এত বড় ক্যাম্পেইন চালুর বিষয়ে মহাপরিচালক বলেন, ‘সারা বিশ্বে ভ্যাকসিনের ডিপ্লোম্যাসি আছে। যে টিকা বেশি পরিমাণ আমাদের কাছে দেওয়া হয়েছে সেটি হচ্ছে সিনোফার্ম। এই টিকা সিঙ্গেল ডোজ, সিঙ্গেল ভায়েল। এর আগে আমরা এনেছিলাম অ্যাস্ট্রাজেনেকা, সেটা ছিল ১০টি ডোজের একটি ভায়েল। এটি বেশি পরিমাণে সংরক্ষণ করা যায়। ঈদের আগে আমাদের টিকা গ্রহণের পরিমাণ কম ছিল।