তারাবি শব্দটি বহুবচন। এর একবচন হলো তারবিহ। এর আভিধানিক অর্থ হলো বিশ্রাম, স্বস্তি, শান্তি ও প্রশান্তি। রমজান মাসে এশার নামাজের পর যে সুন্নতে মুয়াক্কাদা ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা হয়, তাকে তারাবির নামাজ বলে (Taraweeh prayer)। শবে কদরের নামাজ আদায়ের নিয়ম ।
তারাবি নামাজের ফজিলত:
রমজান মাসে তারাবি নামাজের ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমান ও আত্মবিশ্লেষণের সঙ্গে পুণ্য লাভের আশায় রোজা রাখেন, তারাবি নামাজ পড়েন এবং কদরের রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত করেন, তাঁর জীবনের পূর্বের সব গুনাহ মাফ করা হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
আরও পড়ুন:
- রোজার প্রশ্ন ও উত্তর, রমজান মাস নিয়ে কিছু কথা
- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সঠিক নিয়ত ও তাসবিহ
- রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া
তারাবির নামাজ ৮ না ২০ রাকাত
তারাবির নামাজ এক ধরনের নফল এবাদত । এটির নির্দিষ্ট কোনো রাকাতের কথা বলা হয়নি, দুই রাকাত করে ৮ রাকাত, ১০ রাকাত, ১২ রাকাত, ১৬ রাকাত, ২০ রাকাত পড়া যায়। কত রাকাত হবে, রাসুলুল্লাহ (স.) তা নির্ধারণ করে যাননি।
পুরুষদের তারাবির নামাজ মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করা সুন্নত। তারাবির নামাজে কোরআন শরিফ খতম করা সুন্নত। নারীদের জন্যও ২০ রাকাত সুন্নত। তারাবির নামাজের সময় হলো এশার নামাজের পর থেকে ফজরের নামাজের আগ পর্যন্ত।
তারাবির নামাজের সহীহ নিয়ম
এশা’র চার রাকাত ফরজ নামাজ ও ২ রাকাত সুন্নত আদায় করার পর এবং বিতর নামাজের আগে ২০ রাকাত তারাবীহ্ নামাজ আদায় করতে হয়।
তারাবির নামাজের নিয়ত আরবিতে
نويت ان اصلى لله تعالى ركعتى صلوة التراويح سنة رسول الله تعالى متوجها الى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر
(নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা, রকাআতাই সালাতিত তারাবিহ সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তা’আলা, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার।)
তারাবির নামাজের নিয়ত বাংলায়
আমি ক্বিবলামুখি হয়ে দু’রাকাআত তারাবিহ সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ নামাযের নিয়ত করছি। আল্লাহু আকবার।
তারাবিহ নামাজের চার রাকাত পরপর মোনাজাত:
চার রাকাআ’ত পর পর মোনাজাত করা যায়, আবার একেবারে নামাজ শেষ করেও একবারেই মোনাজাত করা যায়। তারাবিহ নামাজের জন্য নির্দিষ্ট কোনো দুআ নেই। আমরা সব সময় নামাজের ক্ষেত্রে যে সব দোয়া পড়ে থাকি এগুলো পড়লেই হয়। তারপরও বহু পূর্বে কোনো বুজর্গ বর্তমানে তারাবিহতে পঠিত দোয়ার প্রচলন করেছেন, যার অর্থ ভাল এবং উত্তম বিধায় আমরা তারাবিহ নামাজে এই দোয়াটি পড়ে থাকি।
তারাবির নামাজের চার রাকাত পরপর দোয়া আরবি
سبحان ذى الملك والملكوت سبحان ذى العزة والعظمة والهيبة والقدرة والكبرياء والجبروت . سبحان الملك الحى الذى لاينام ولا يموت ابدا ابدا سبوح قدوس ربنا ورب الملئكة والروح
উচ্চারণ: সুব্হানাযিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি সুবহানাযিল ইযযাতি ওয়াল আযমাতি ওয়াল হাইবাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিবরিয়ায়ি ওয়াল জাবারূত। সুব্হানাল মালিকিল হায়্যিল্লাযি লা-ইয়ানামু ওয়ালা ইয়ামুতু আবাদান আবাদা। সুব্বুহুন কুদ্দুছুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ।
তারাবি নামাজের মোনাজাত:
اَللَهُمَّ اِنَّا نَسْئَالُكَ الْجَنَّةَ وَ نَعُوْذُبِكَ مِنَ النَّارِ يَا خَالِقَ الْجَنَّةَ وَالنَّارِ- بِرَحْمَتِكَ يَاعَزِيْزُ يَا غَفَّارُ يَا كَرِيْمُ يَا سَتَّارُ يَا رَحِيْمُ يَاجَبَّارُ يَاخَالِقُ يَابَارُّ – اَللَّهُمَّ اَجِرْنَا مِنَ النَّارِ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ- بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّحِمِيْنَ
বাংলা উচ্চারণ: (আল্লা-হুম্মা ইন্না নাস আলুকাল্ জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনান্নারি ইয়া খালিকাল জান্নাতা ওয়ান্নারি বিরাহমাতিকা ইয়া আজীজু, ইয়া গাফ্ফারু, ইয়া কারীমু, ইয়া সাত্তারু, ইয়া রাহিমু ,ইয়া জাব্বারু ইয়া খালেকু, ইয়া রাররূ, আল্লাহুমা আজির না মিনান্নারি, ইয়া মূজিরু ইয়া মুজিরু, বিরাহ্মাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমীন।)
প্রশ্নঃ তারাবীহ নামায কি?
উত্তর: তারাবীহ নামাজ হল রমজান মাসে এশার নামাজের পর একটি বিশেষ নামাজ।রমজান মাসে এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নতের পর এবং বিতর নামাজের আগে এই নামাজ আদায় করা হয়।
প্রশ্নঃ তারাবীহ নামাযে কয় রাকাত আছে?
উত্তর: রমজান মাসের রাতে এশার নামাজের পর বিশেষ ইবাদত হল তারাবিহ নামাজ। সহীহ আল বুখারীর একটি হাদিস অনুযায়ী তারাবিহ নামাজ আট রাকাত। রাসুল (সাঃ) আট রাকাত তারাবিহ নামাজের ইমামতি করেছেন। তবে, ২০ রাকাতের প্রথাটি মুসলিম দেশগুলিতে সবচেয়ে ব্যাপকভাবে অনুসরণ করার ঐতিহ্য রয়েছে। যাইহোক, খলিফা ওমর বিন আব্দুল আজিজের সময় (৭১৭ থেকে ৭২০ খ্রিস্টাব্দ) মদিনার লোকেরা ৩৬ রাকাত তারাবিহ নামাজ পালন করতেন।
প্রশ্নঃ মহিলারা কি মসজিদে তারাবীহ নামায পড়তে পারবে?
উত্তরঃ মহিলাদের মসজিদে তারাবীহ নামায পড়ার অনুমতি আছে, তবে তা বাধ্যতামূলক নয়। মহিলারা বাড়িতে, এককভাবে বা অন্য মহিলাদের সাথে জামাতে নামাজ পড়তে পারেন।
প্রশ্নঃ দিনের বেলা তারাবীহ নামায পড়া যাবে কি?
উত্তরঃ না, তারাবীহ নামায রাতে এশার নামাযের পর পড়তে হবে।
প্রশ্নঃ তারাবীহ নামাযের তাৎপর্য কি?
উত্তর: তারাবিহ নামাজ তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এটি পবিত্র রমজান মাসে অতিরিক্ত সওয়াব অর্জনের একটি উপায়। এটি আল্লাহর সাথে সংযোগ স্থাপন এবং নিজের আত্মশুদ্ধি লাভের একটি উপায়।
প্রশ্নঃ কার উপর তারাবীহ নামায পড়া ফরজ?
উত্তরঃ তারাবীহ নামায একটি বিশেষ স্বেচ্ছাকৃত নামায, আর তাই এটা করতে কেউ বাধ্য নয়। যাইহোক, সমস্ত মুসলমানদের জন্য নামাজ একটি বড় ইবাদত। এই নামাজ রমজান মাসে আল্লাহর কাছ থেকে অতিরিক্ত সওয়াব অর্জনের একটি উপায়।
প্রশ্নঃ তারাবীহ সালাত সাধারণত কতক্ষণ স্থায়ী হয়?
উত্তর: তারাবিহ নামাযের সময় মসজিদ এবং ইমামের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। সাধারণত, এটি সম্পূর্ণ হতে ৪৫ মিনিট থেকে দুই ঘন্টা সময় লাগতে পারে।
প্রশ্নঃ তারাবীহ নামায কি একা একা পড়া যাবে?
উত্তর: তারাবীহ নামায একাই আদায় করা যেতে পারে, তবে এটিকে জামাতে আদায় করার পরামর্শ দেওয়া হয়, কারণ এটি অধিক ফলপ্রসূ এবং সম্প্রদায়ের অনুভূতি প্রদান করে।
প্রশ্নঃ ঘরে তারাবীহ নামায পড়া কি জায়েজ?
উত্তরঃ হ্যাঁ, ঘরে তারাবীহ নামায পড়া জায়েয। তবে সম্ভব হলে মসজিদে জামাতে আদায় করা বাঞ্ছনীয়।
প্রশ্নঃ তারাবীহ নামায কিভাবে পড়া উচিত?
উত্তরঃ তারাবীহ নামায দুই রাকাত করে আদায় করা হয়। ফরয এশার নামাযের পর, একজনকে তারাবীহ নামাযের প্রথম দুই রাকাত পড়তে হবে, তারপরে সংক্ষিপ্ত বিরতি দিয়ে এবং তারপরে দুই রাকাত। এভাবে ২০ রাকাত সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত এটি পুনরাবৃত্তি করা হয়।
প্রশ্নঃ তারাবীহ নামাযের সময় আমি কোন কোন দোয়া (দুআ) পাঠ করতে পারি?
এখানে কিছু দোয়া (দুআ) রয়েছে যা আপনি তারাবীহ নামাজের সময় পড়তে পারেন:
- “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা ‘আফুউউউন তুহিব্বুল-‘আফওয়া ফা’ফু’ আন্নি।” (হে আল্লাহ, আপনি ক্ষমাশীল এবং আপনি ক্ষমা পছন্দ করেন, তাই আমাকে ক্ষমা করুন।) “Allaahumma innaka ‘afuwwun tuhibbul-‘afwa fa’fu ‘anni.” (O Allah, You are Forgiving and You love forgiveness, so forgive me.)
- “রাব্বানা আতিনা ফিদ-দুনিয়া হাসানাহ ওয়া ফিল-আখিরাতি হাসানাহ ওয়া কিনা আযবান-নার।” (হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ ও পরকালে কল্যাণ দান করুন এবং আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।) – “Rabbana atina fid-dunya hasanah wa fil-akhirati hasanah wa qina ‘adhaban-naar.” (Our Lord, grant us good in this world and good in the Hereafter, and protect us from the punishment of the Fire.)
- “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহ, লাহু আল-মুলক ওয়া লাহু আল-হামদ ওয়া হুওয়া ‘আলা কুল্লি শায়ীন কাদির।” (আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তিনি এক এবং তাঁর কোন শরীক নেই। সার্বভৌমত্ব ও সকল প্রশংসা তাঁরই এবং তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।) – “La ilaha illallah, wahdahu la sharika lah, lahu al-mulk wa lahu al-hamd wa huwa ‘ala kulli shay’in qadir.” (There is no god but Allah, He is One and He has no partners. To Him belongs all sovereignty and all praise, and He is over all things capable.)
- “আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল-হামদ।” (আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, এবং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।) – “Allahu Akbar, wa lillahil-hamd.” (Allah is Most Great, and all praise is due to Allah.)
প্রশ্নঃ তারাবিহ নামাজের উপকারিতা কি?
যারা রমজান মাসে এটা পালন করেন তাদের জন্য তারাবিহ নামাজের বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। এই সুবিধার মধ্যে যেমন:
- বর্ধিত আধ্যাত্মিকতা: তারাবীহ নামাজ আল্লাহর সাথে সংযোগ স্থাপন এবং তাঁর আশীর্বাদ পাওয়ার একটি উত্তম উপায়। মুসলমানরা এই নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতা এবং তাদের সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য অনুভব করেন।
- পাপের ক্ষমা: রমজান হল ক্ষমার মাস, এবং তারাবীহ নামাজ হল মুসলমানদের ক্ষমা চাওয়ার একটি সুযোগ। এটা বিশ্বাস করা হয় যে, যারা আন্তরিকতা এবং নম্রতার সাথে রমজানের এই নামাজটি আদায় করেন আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দেন।
- কুরআনের উন্নত বোধগম্যতা: তারাবীহের সময়, কুরআনের বিভিন্ন অংশ তেলাওয়াত করা হয়, যা মুসলমানদের পবিত্র গ্রন্থের শিক্ষাগুলিকে আরও ভালভাবে বোঝার এবং চিন্তা করার সুযোগ দেয়।
- শারীরিক ও মানসিক সুবিধা: তারাবীহ পালনের শারীরিক ও মানসিক কসরত নামাজীদের আরও নমনীয় হতে সাহায্য করতে পারে। দীর্ঘ প্রার্থনার সময় মনোযোগ বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় মানসিক শৃঙ্খলার মাধ্যমে মুসলিমদের একাগ্রতা এবং মননশীলতা উন্নত জীবন গঠনে সাহায্য করতে পারে।
- সম্প্রদায় গঠন: তারাবিহ নামাজ প্রায়ই জামাতে সম্পাদিত হয়, যা মুসলমানদের একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে সম্প্রদায় এবং সংহতির বোধ তৈরি করার সুযোগ করে দেয়। এটি মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে একত্রিত এবং সমর্থনের বোধ জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে।