রিজিক বৃদ্ধির দোয়া

আরবি শব্দ রিযক/ রিজিক ( رِزْق ‘Rizq’ in Arabic – English ( Provision, to give sustenance) বলতে বুঝায় জীবিকার বিধান বা উপায়, যা একমাত্র আল্লাহর (আল্লাহ তায়ালা) কাছ থেকে খাদ্য, সম্পদ এবং জীবন ধারনের জন্য অন্যান্য সব কিছু প্রয়োজন আকারে মানব জাতির কাছে পৌঁছায়। ইসলামে এটি একটি মৌলিক বিশ্বাস যে, আল্লাহ একমাত্র রিযিক প্রদানকারী এবং মানুষের যা কিছু প্রয়োজন, সকিছু তাঁর কাছ থেকে আসে।

আরও পড়ুন:

ইসলামিক প্রেক্ষাপটে, রিজিক বৃদ্ধির অর্থ হতে পারে সফলতা ও সমৃদ্ধির জন্য আল্লাহর আশীর্বাদ ও করুণার উপর নির্ভর করে বৈধ উপায়ে জীবিকা অর্জনের প্রচেষ্টা করা। এতে আধ্যাত্মিক বাধ্যবাধকতার সাথে নিজের পার্থিব সাধনার ভারসাম্য বজায় রাখা এবং জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর নির্দেশনা মেনে চলা।

একজন মুমিনের উচিত হালাল রিজিকের জন্য সবসময় আমল করা। হজরত ঈসা (আ.) নিজের জন্য এবং আগের ও পরের সবার জন্য রিজিক পেতে দোয়া করেছিলেন।

দোয়াটি আল্লাহর তায়ালার এতই পছন্দনীয় হয়ে যায় যে, তিনি মানুষকে অভাবমুক্ত রাখার জন্য এই দোয়াটি কোরআনে তুলে ধরেছেন। সুতরাং অভাব মোচনে এবং উত্তম রিজিক পেতে এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়া। তাহলো-

রিজিক বৃদ্ধির দোয়া

قَالَ عِیۡسَی ابۡنُ مَرۡیَمَ اللّٰهُمَّ رَبَّنَاۤ اَنۡزِلۡ عَلَیۡنَا مَآئِدَۃً مِّنَ السَّمَآءِ تَکُوۡنُ لَنَا عِیۡدًا لِّاَوَّلِنَا وَ اٰخِرِنَا وَ اٰیَۃً مِّنۡکَ ۚ وَ ارۡزُقۡنَا

 وَأَنتَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ

সুরা মায়েদা আরবি উচ্চারণ
: ‘ কা-লা ‘ঈছাবনুমারইয়ামাল্লা-হুম্মা – রাব্বানা… আন..যিল আলাইনা মা-ইদাতাম.. মিনাস সামায়ি তাকুনু লানা ঈদা,  তাকুনু লানা ঈ-দাল্লি আওওয়ালিনা ওয়া আখিরিনা ওয়া আ – ইয়াতাম মিনক, ওয়ারযুকনা ওয়া আনতা খায়রুর রাযিকিন।’ (সুরা মায়েদা: আয়াত ১১৪)

অর্থ : ‘হে আল্লাহ, আমাদের পালনকর্তা! আমাদের প্রতি আকাশ থেকে খাদ্যভর্তি খাঞ্চা অবতরণ করুন। তা আমাদের জন্যে অর্থাৎ আমাদের প্রথম ও পরবর্তী সবার জন্য আনন্দোৎসব হবে এবং আপনার পক্ষ থেকে একটি নিদর্শন হবে। আপনি আমাদের রিজিক দিন। আপনিই শ্রেষ্ট রিজিকদাতা।’

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে অভাব থেকে মুক্তি ও উত্তম রিজিক পাওয়ার এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়ার তাগিদ দিয়েছেন।

রিজিকের বিষয়ে আল্লাহ তাআলা কোরআন কারিমে বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ, তিনিই তো রিযিকদাতা, প্রবল শক্তিধর, পরাক্রমশালী।’ (সূরা যারিয়াত : আয়াত ৫৮)। অন্যদিকে সুরা নুহ (আয়াত ১০-১২)-এ আল্লাহতাআলা বান্দাদের রিজিকে বরকত লাভের জন্য বলেন, অতঃপর বলেছি, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন এবং তিনি তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা সমৃদ্ধ করবেন এবং তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং প্রবাহিত করবেন নদীনালা।’

আল্লাহ তা’আলা সৃষ্টি জগতের সকল কিছুকে রিযিক প্রদান করছেন। তিনিই উত্তম রিযিকদাতা। ” মারইয়াম-তনয় ঈসা বললেন, হে আল্লাহ আমাদের রব! আমাদের জন্য আসমান থেকে খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চা পাঠান; এটা আমাদের ও আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবার জন্য হবে আনন্দোৎসব স্বরূপ এবং আপনার কাছ থেকে নিদর্শন। আর আমাদেরকে জীবিকা দান করুন; আপনিই তো শ্রেষ্ঠ জীবিকাদাতা। (সূরা মায়েদা : আয়াত ১১৪)।

সুরা তালাকের ২ ও ৩ নম্বর আয়াতের মাধ্যমে জানতে পারি। ‘আর যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তার উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।’

এছাড়াও হাদিসে রিজিক বৃদ্ধি ও ঋণ থেকে মুক্তি লাভের বিভিন্ন দোয়া রয়েছে।

একবার হজরত আলী (রা.)-এর কাছে এক ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি কিছু সাহায্য চায়। এ সময় আলী (রা.) তাকে বলেন, আমি কি তোমাকে একটি দোয়া বলব, যা আমাকে রাসুলুল্লাহ (সা.) শিক্ষা দিয়েছেন? যদি তুমি এটা পাঠ করো, তাহলে আল্লাহই তোমার ঋণমুক্তির ব্যাপারে দায়িত্ব নিবেন, যদি তোমার ঋণ পর্বতসমানও হয়।

اللهم اكْفِنِي بِحَلَالِكَ عن حَرَامِكَ ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাকফিনি বি হালালিকা আন হারামিকা, ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক।

অর্থ : হে আল্লাহ! হারামের পরিবর্তে তোমার হালাল রুজি আমার জন্য যথেষ্ট করো। আর তোমাকে ছাড়া আমাকে কারো মুখাপেক্ষী কোরো না এবং স্বীয় অনুগ্রহ দ্বারা আমাকে স্বচ্ছলতা দান কর। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৬৩; মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ১৩২১)

যে আমলে আল্লাহ তা’লা রিজিক বাড়িয়ে দেন

ইসলামে, জীবিকা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি আশীর্বাদ হিসাবে বিবেচিত হয় এবং মুসলমানদেরকে জীবিকা উপার্জনের হালাল (অনুমতিপ্রাপ্ত) উপায়ের জন্য চেষ্টা করার জন্য উত্সাহিত করা হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে রিযিক বৃদ্ধির জন্য এখানে কিছু আমলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে:

আল্লাহর আশীর্বাদ/দোয়া অন্বেষণ করুন: মুসলমানদেরকে তাদের জীবিকা সহ তাদের জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর আশীর্বাদ পেতে উৎসাহিত করা হয়। এর জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা, তাঁর নির্দেশনা চাওয়া এবং তাঁর উপর ভরসা করা।

কঠোর পরিশ্রম করুন: ইসলাম জীবিকা অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের গুরুত্বের উপর জোর দেয়। মুসলমানদের উচিত তাদের কাজে পারদর্শী হওয়ার চেষ্টা করা, তাদের সর্বোত্তম চেষ্টা করা, যাতে তারা তাদের নির্বাচিত পেশা বা ব্যবসায় ফলপ্রসূ হতে পারে।

সৎ হওয়া: রিজিক বৃদ্ধির অন্যতম একটি মূল শর্ত হল সৎ হওয়া। ইসলামে সততা একটি মৌলিক মূল্য, এবং মুসলমানদের ব্যবসা এবং আর্থিক লেনদেন সহ তাদের সমস্ত কাজ সৎ হতে হবে। মুসলমান কখনো অসত্যের অনুগামী হয় না, এবং তাদের কাজে প্রতারণা, এবং অন্যান্য অনৈতিক অভ্যাস এড়িয়ে যাবতীয় কর্মকাণ্ডের প্রতিটি পদক্ষেপে সৎ থাকা জরুরি কর্তব্য বলে পরিগণিত হয়.

দান-খয়রাত করা: দান-খয়রাত করা হল ধন-সম্পদ পবিত্র করার এবং আল্লাহর রহমত কামনা করার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। মুসলমানদের অনুপ্রাণিত করা হয় যারা গরীব, এতিম এবং অভাবী তাদের উদারভাবে দান করতে।

হারাম (নিষিদ্ধ) আয়ের উৎসগুলি এড়িয়ে চলুন: মুসলমানদের হারাম উপায়ে যেমন সুদ-ভিত্তিক লেনদেন, জুয়া এবং অন্যান্য বেআইনি কার্যকলাপের মাধ্যমে জীবিকা উপার্জন করা নিষিদ্ধ। মুসলমানদের হালাল উপায়ে জীবিকা অর্জনের চেষ্টা করা উচিত এবং হারাম বলে বিবেচিত আয়ের যে কোনো উৎস এড়ানো উচিত।

জ্ঞান অন্বেষণ: ইসলাম জ্ঞান অন্বেষণ এবং একটি উন্নত জীবিকা নির্বাহ করতে পারে এমন দক্ষতা অর্জনের উপর খুব জোর দেয়। মুসলমানদের উচিত তাদের নির্বাচিত ক্ষেত্রে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা, নতুন দক্ষতা অর্জন করা এবং ক্রমাগত নিজেদের উন্নতির চেষ্টা করা।

সামগ্রিকভাবে, মুসলমানদেরকে হালাল উপায়ে জীবিকা অন্বেষণ করতে, কঠোর পরিশ্রম করতে, সৎ হতে, দান-খয়রাত করতে, হারাম আয়ের উৎস এড়াতে এবং ইসলামের দৃষ্টিতে তাদের জীবিকা বৃদ্ধির জন্য জ্ঞান অন্বেষণ করতে উত্সাহিত করা হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here