পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন যে, তোমরা বিপদে ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে আমার কাছে দোয়া চাও। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা, যা আমাদেরকে বিপদে ধৈর্যশীল হতে এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে উৎসাহিত করে।
কুরআনুল কারীমের সূরা আল-বাকারা ২:১৫৩ নং আয়াতটি হলো,
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اسْتَعِیْنُوْا بِالصَّبْرِ وَ الصَّلٰوةِؕ-اِنَّ اللّٰهَ مَعَ الصّٰبِرِیْنَ
সূরা বাকারা ১৫৩ নং আয়াত বাংলা উচ্চারণ:
ইয়া..আইয়ুহাল্লাযীনা আ-মানুছতা’ঈনূ বিসসাবরি ওয়াসসালা-ত; ইন্নাল্লা-হা মা’আসসাবিরীন।
“হে মুমিনগণ! ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।”
ধৈর্য ও নামাজ/সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও
এই আয়াতে মহান আল্লাহ মুমিনদেরকে ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাইতে নির্দেশ দিচ্ছেন। কারণ তিনি জানেন যে, ধৈর্য ও নামাজই মানুষকে কঠিন পরিস্থিতিতে সাহায্য করতে পারে।
ধৈর্য হলো কঠিন পরিস্থিতিতেও আশা ও সাহস ধরে রাখার মানসিক শক্তি। নামাজ হলো আল্লাহর সাথে যোগাযোগ করার এবং তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করার একটি পদ্ধতি। এই আয়াতে মহান আল্লাহ মুমিনদেরকে ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাইতে নির্দেশ দিচ্ছেন। কারণ তিনি জানেন যে, ধৈর্য ও নামাজই মানুষকে কঠিন পরিস্থিতিতে সাহায্য করতে পারে।
ধৈর্য মানুষকে শক্তিশালী করে এবং তাদেরকে কঠিন পরিস্থিতিতেও আশা ও সাহস ধরে রাখতে সাহায্য করে। নামাজ মানুষকে আল্লাহর সাথে যোগাযোগ করতে এবং তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করতে সাহায্য করে। যখন মানুষ আল্লাহর কাছে সাহায্য চায়, তখন তিনি অবশ্যই সাহায্য করেন।
তাই, মুমিনদের উচিত সবসময় ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাওয়া। কারণ মহান আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন এবং তিনি অবশ্যই তাদেরকে সাহায্য করবেন।
আয়াতের ব্যাখ্যা:
- “হে মুমিনগণ!” – এই আয়াতটি মুমিনদেরকে সম্বোধন করে।
- “ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাও।” – এই আয়াতে ধৈর্য ও নামাজকে সাহায্য চাওয়ার দুটি উপায় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
- “নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।” – এই আয়াতে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন এবং তিনি তাদেরকে সাহায্য করবেন।
আয়াতের শিক্ষা:
- এই আয়াত থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি যে, ধৈর্য ও নামাজ হলো দুটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস যা আমাদের কঠিন পরিস্থিতিতে সাহায্য করতে পারে।
- আমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাইতে পারি।
- আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন এবং তিনি তাদেরকে সাহায্য করবেন।
আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, “তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।” (সুরা গাফির: ৬০)
আল্লাহর পছন্দ: ধৈর্যশীল ব্যক্তি আল্লাহর অতি প্রিয়। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “তোমরা ধৈর্য ধারণ করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।” (সূরা আনফাল: ৪৬)
আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিজদা কর এবং ইবাদাত কর
আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিজদা করা এবং তাঁর ইবাদত করা হল মুসলমানদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য। কুরআন মজিদে আল্লাহ বলেন, “সুতরাং তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিজদা করো এবং ইবাদত করো।” (সুরা নাজম: ৬২)
#সিজদা হলো ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি আল্লাহর কাছে আনুগত্য এবং শ্রদ্ধা প্রদর্শনের একটি প্রকাশ। সিজদা আমাদের আত্মাকে শান্তি ও প্রশান্তি দেয় এবং আমাদের আল্লাহর কাছে আরও বেশি কাছে নিয়ে যায়। আমরা মুসলমানরা নামাজ পড়ার সময় সিজদা করে মাথা মাটিতে স্পর্শ করি। এটি একটি প্রতীক যে আমরা আল্লাহর কাছে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে সমর্পন করে সাহায্য প্রার্থনা করলাম।
#ইবাদত হল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি উপায়। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমরা আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত এবং তাঁর আদেশ ও নিষেধ মেনে চলতে হবে। ইবাদত আমাদের আত্মাকে পবিত্র করে এবং আমাদের আল্লাহর প্রতি আরও বেশি ভালবাসা তৈরি করে।
আমরা সকলেই আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত এবং তাঁর ইবাদত করা উচিত। সিজদা এবং ইবাদত আমাদের আল্লাহর কাছে আরও বেশি কাছে নিয়ে যায় এবং আমাদের আত্মাকে শান্তি ও প্রশান্তি দেয়।
আল্লাহতায়ালা বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাক
পবিত্র কুরআনের সূরা আল-মুমিন : ৬০ – এর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন যে,
তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। যারা অহংকারে আমার বিমুখ হয়েছেন, নিশ্চিতই তারা লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
নবীর উপর দরূদ পাঠ করা
নবীর উপর দরূদ পাঠ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা মুসলমানদেরকে আল্লাহর কাছে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্য দোয়া করতে উৎসাহিত করে। এটি একটি উপায়, যার মাধ্যমে মুসলমানরা নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি তাদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করে।
নবীর উপর দরূদ পাঠ করা সম্পর্কে সূরা আহজাব: ৫৬ – এর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন যে, “নিশ্চয় আল্লাহ ও তার ফেরেশতারা নবীর প্রতি অনুগ্রহ-দরূদ পেশ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও নবীর উপর দরূদ পাঠ কর এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।”
দরূদ পাঠের অনেক ফজিলত রয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার উপর দশবার রহমত বর্ষণ করবেন, তার দশটি গুনাহ মাফ করে দেবেন এবং তার দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন।” (তিরমিজি)
বিপদে পড়লে কোন দোয়া পড়তে পারেন?
পবিত্র কোরআনের আল-আম্বিয়া, আয়াত ৮৮ – তে আল্লাহতায়ালা বলেছেন যে, তখন আমি তার (হযরত ইউনুস (আঃ) ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম এবং বিপদ থেকে তাকে উদ্ধার করেছিলাম। আর এভাবেই আমি মুমিনদেরকে উদ্ধার করে থাকি।
হযরত ইউনুস (আঃ)৪০ দিন ভীষণ কষ্টের মধ্যে মাছের পেট থেকে নিস্তার পেতে আল্লাহর আনুগত্যে লাভের আশায় দোয়া উইনুস পড়েছিলেন। এই দোয়ার বরকতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাকে মাছের পেট থেকে উদ্ধার করেন।
বিপদে পড়লে দোয়া উইনুস পড়া হয় কারণ এটি একটি খুব শক্তিশালী দোয়া, যা আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার জন্য পড়া হয়। এটি একটি খুব সংক্ষিপ্ত দোয়া, কিন্তু এটি খুব অর্থপূর্ণ। এটি আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার জন্য একটি আবেগপূর্ণ অনুরোধ।
দোয়া উইনুস হলো: সূরা আল আম্বিয়া: ৮৭
“লা ইলাহা ইল্লা আংতা সুবহানাকা ইন্নি কুংতু মিনাজ জ্বালিমিন।” –
এর অর্থ হলো: “তোমার ছাড়া কোনও উপাস্য নেই, তুমি পবিত্র, নিশ্চয়ই আমি পাপীদের একজন।”
এই দোয়াটি হযরত ইউনুস (আ.) দ্বারা বলা হয়েছিল যখন তিনি একটি মাছের পেটে আবদ্ধ ছিলেন। তিনি আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন এবং আল্লাহ তাকে উদ্ধার করেছিলেন। এই দোয়াটি খুব শক্তিশালী কারণ এটি আল্লাহর কাছে আত্মনিবেদন এবং ক্ষমা চাওয়ার একটি আবেগপূর্ণ অনুরোধ।
যখন আপনি বিপদে পড়েন, তখন আপনি দোয়া উইনুস পড়তে পারেন। এটি আপনাকে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে এবং তাঁর কাছে ক্ষমা চাইতে সাহায্য করবে। এটি আপনাকে শান্তি এবং আশা অনুভব করতে সাহায্য করবে।
এছাড়াও আমল করতে পারেন
- সাইয়িদুল ইস্তিগফার, ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দোয়া
- তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা
- ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম – এটি হল আল্লাহ তাআলার অনেক সুন্দর গুণবাচক নামসমূহের মধ্যে একটি। এই নামটি বেশি বেশি করে পড়লে আল্লাহতায়ালা আমলকারীর এই দুনিয়া ও পরকালের সব কাজ সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে দেবেন।