শেখ হাসিনা
Photo: Collected

দেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় দফা বিস্তার প্রতিরোধে ঘরের বাইরে মাস্ক পরিধানের জন্য আবারও জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইউরোপ ও আমেরিকায় নতুন করে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে তিনি এই আহ্বান জানিয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার সকালে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকটি ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ও সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রীরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন। খবর বাসসের।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ বিষয়ে অবহিত করেন। তিনি বলেন, ‘মন্ত্রিসভা বৈঠকে কভিড-১৯ নিয়ে স্পেশাল আলোচনা হয়েছে। সব জায়গা থেকেই আমরা দেখছি, ইন্টারন্যাশনাল রিপোর্টিং থেকে দেখছি, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ- সেই সব জায়গায় আবার প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েক দিন থেকে মিটিংয়ে কথাবার্তা বলছেন। প্রধানমন্ত্রী বিশেষভাবে নজর দিচ্ছেন যে, সবাই যাতে একটু কেয়ারফুল থাকি, বিশেষ করে আমাদের দিক থেকে আমরা যেন সবাই মাস্ক ব্যবহার করি।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, ‘বাকি কী হবে না হবে সেটা তো একটা অনিশ্চিত বিষয়। আমরা সবাই যদি মাস্ক ব্যবহার করি, তাহলে অটোমেটিক আমাদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা অনেক কমে আসে। তাই, আপনাদের মিডিয়ার বন্ধুদের অনুরোধ করবো, যেভাবেই হোক মানুষকে আরও বেশি করে সচেতন করতে হবে। অনেকের মধ্যে একটু রিল্যাক্স ভাব দেখা যাচ্ছে। পাবলিক প্লেস বা মসজিদ বা অন্য কোনো জমায়েত, সামনে দুর্গাপূজায় যেসব অনুষ্ঠান হবে- এসবে কোনো অবস্থায়ই কেউ যেন মাস্ক ছাড়া না আসে এটা আরেকটু জোরদার করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা দৃঢ় ইচ্ছা ও আশা প্রকাশ করেছে যে, সবাই যদি মাস্ক ব্যবহারে আরও একটু মনযোগী হয়, তাহলে অটোমেটিক্যালি আমরা এটা থেকে রিলিভ পাব। আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমরা যেন সবাই নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করি। অন্তত যখন বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে যেন এটা করি।’

এ বিষয়ে মাঠ প্রশাসনকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হবে কি-না জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ”গতকাল কমিশনার কনফারেন্স ছিল, সেখানে আমরা সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছি। ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে বলে দেওয়া হয়েছে, তারা যেন ইমামদের মাধ্যমে সব মসজিদ থেকে অন্তত জোহর ও মাগরিব নামাজের পর মাইক বা সামনাসামনি নামাজের সময় জনগণকে মাস্ক পরিধানের ব্যাপারে সচেতন করেন। এছাড়া প্রত্যেকটি মসজিদ, অন্যান্য বাজার বা গণজমায়েত হয়- এমন স্থানে যাতে স্লোগানের মতো (লেখা) থাকে যে ‘অনুগ্রহ করে মাস্ক ছাড়া কেউ প্রবেশ করবেন না- এটা সবার কাছেই অনুরোধ থাকবে।”

তিনি আরও বলেন, ‘প্রয়োজনে মোবাইল কোর্টও পরিচালনা করা হবে। গতকাল কমিশনারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মাস্ক পরাতে যেভাবে যতটুকু সম্ভব যেন মানুষকে রিকোয়েস্ট, মোটিভেট করে। যদি ফোর্স করতে হয়, আইন প্রয়োগ করতে হয়, তাহলে আইন প্রয়োগ করব।’

এদিনের সভায় ‘মন্ত্রিসভা বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে ২০২০ সালের তৃতীয় ত্রৈমাসিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রতিবেদন’ উপস্থাপিত হয়। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ ও অস্ট্রিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরের লক্ষ্যে ‘এফার সার্ভিসেস এগ্রিমেন্ট বিটুউইন দ্য অস্ট্রিয়ান ফেডারেল গর্ভনমেন্ট অ্যান্ড দ্য গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক চুক্তির খসড়া অনুমোদন এবং গত ১৪ সেপ্টেম্বর তুরস্কের আঙ্কারায় প্রধানমন্ত্রীর নবনির্মিত দূতাবাস ভবন উদ্বোধন উপলক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের তুরস্ক সফর সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিতকরণ করা হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ত্রৈমাসিক রিপোর্ট বাস্তবায়নের হারে পুরো মন্ত্রিসভাই সন্তোষ প্রকাশ করেছে এবং বাস্তবাবস্থা পর্যবেক্ষণ করে কভিডের কারণে যে প্রতিবন্ধকতা ছিল তা আগামীতে দূর করার বিষয়েও তারা ঐক্যমত পোষণ করেন।

তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের বিরূপ পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিদ্যমান অগ্রগতির হার ৪৬ শতাংশ, এর আগের বছর একই সময়ে এই হার ছিল ৫৮ শতাংশ।’

বর্তমান সরকারের সময়ে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪২৭টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়েছে ৩৫৪টি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৮২ দশমিক ৯০ শতাংশ। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন রয়েছে ৭৩টি। বাস্তবায়নাধীন সিদ্ধান্তের শতকরা হার ১৭ দশমিক ১০ শতাংশ।

আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মন্ত্রিসভা বৈঠকে ১৬৯টি সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে ১১৬টির বাস্তবায়ন হয়েছে, বাস্তবায়নের হার ৬৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৭টি আইন জারি করা হয়েছে। প্রক্রিয়াধীন আছে ৩৩টি। আর নীতি, কর্মকৌশল ও কর্মপরিকল্পনা অনুমোদন হয়েছে ১৭টি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here