‘কারও বিরুদ্ধে আমার কোনও অভিযোগ-অনুযোগ নেই। তাদের আত্মবিশ্বাসের অভাব আছে। আশা করি, এরপর থেকে তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে’। শনিবার (২৫ জুন) সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

বিশ্ব ব্যাংকের মিথ্যা দুর্নীতির অপবাদ দেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বয়স হওয়ার কারণে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ ছাড়তে বলা ড. মুহাম্মদ ইউনুস অর্থায়ন বন্ধ করার সুপারিশ করল। পরে কানাডার আদালতে প্রমাণ হলো, কোনও দুর্নীতি হয়নি।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু এদেশের স্বাধীনতা দিয়েছেন। তার কন্যা হিসেবে এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার দায়িত্ব নিয়েছি। যখন সব প্রতিষ্ঠান অর্থায়ন থেকে সরে গিয়েছিল, আমি সংসদে দাঁড়িয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। এরপর দেশবাসীর অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছিলাম। মানুষের শক্তি বড় শক্তি, সেই শক্তি নিয়ে এই সেতুর কাজ শুরু করি। অনেকের ধারণা ছিল, নিজস্ব অর্থায়নে কীভাবে করবো? জাতির পিতা আমাদের আত্মমর্যাদা নিয়ে চলতে শিখিয়েছিলেন। সেই শিক্ষা নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি।

‘সমগ্র বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে, জাতির পিতার স্বপ্নের আত্মমর্যাদাশীল, আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ.. এদেশের জনগণই হচ্ছে আমার সাহসের ঠিকানা। জনগণকে আমি স্যালুট জানাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা বিশ্বের খুবই খরস্রোতা এবং অনুনমেয়। এখানে সেতু করা চ্যালেঞ্জ ছিল। সকলে মিলে এই সেতু অবশেষে আমরা সম্পন্ন করেছি। এর গুণগত মানে কোনও আপস করা হয়নি। সেতু নির্মাণ করা হয়েছে বিশ্বের সর্বাধুনিক উপকরণ ব্যবহার করে। যেভাবে পাইলিং করা হয়েছে, বিশ্বের কোনও সেতুতে ব্যবহার করা হয়নি। ভূমিকম্প প্রতিরোধে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশ্বের পাঠ্যবইয়ে এই সেতুর নির্মাণশৈলী স্থান পাবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

তিনি বলেন, এটা একটা আশ্চর্য সৃষ্টি। এটা থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। এটা শুধু বাংলাদেশ নয়, আঞ্চলিক যোগাযোগের ক্ষেত্রেও এই সেতু অবদান রাখবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেতু যখন করতে যাই, তখন অনেক মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়। মানসিক যন্ত্রণা তাদের পরিবারসহ ভোগ করেছে। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও এই সেতু নির্মাণের যারা জড়িত ছিল, তাদের ধন্যবাদ-কৃতজ্ঞতা জানাই। দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, পাশে থাকার কারণে। দুই পাড়ের যারা পৈত্রিক ভিটেমাটি ছেড়ে দিয়েছে, তাদেরও ধন্যবাদ।

শেখ হাসিনা বলেন, সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পেরেছি। এটা শুধু সেতু নয়, ইট সিমেন্টের কন্সস্ট্রাকশন নয়; এই সেতু আমাদের অহংকার, গর্ব। আমাদের সক্ষমতার প্রতীক। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, প্রত্যয়। যে আমরা এই সেতু তৈরি করবোই, সেই জেদ-প্রত্যয়।