দেশের প্রবীণ আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার রফিক-উল হক আজ শনিবার সকালে মারা গেছেন ( ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

রাজধানীর আদ-দ্বীন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল সাড়ে ৮টায় তিনি মারা যান বলে হাসপাতালের পরিচালক ডা. অধ্যাপক নাহিদ ইয়াসমিন নিশ্চিত করেছেন।

বিএনপির পক্ষ থেকে, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আদ-দ্বীন মহিলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রফিক-উল হকের মৃতদেহের সামনে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন এবং শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

তিনি বলেন, রফিক-উল হকের মৃত্যু দেশের বিচার বিভাগের জন্য বড় ধাক্কা। ‘তার মৃত্যুতে সৃষ্টি হওয়া বড় শূন্যতা সহজেই পূরণ হবার নয়।’

তিনি বলেন, দেশে রফিক-উল হকের মতো আইনজীবীর অভাব রয়েছে। ‘তিনি সর্বদা নিপীড়িতদের পাশে ছিলেন এবং তাদের আইনি সহায়তা দিয়েছেন।’

এছাড়া ব্যারিস্টার রফিক-উল-হকের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। এক শোকবার্তায় প্রধান বিচারপতি বলেন, রফিক-উল হক একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিলেন। আইনের শাসন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তার অবদান অনস্বীকার্য।

এটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন সাবেক এটর্নি জেনারেল বিশিষ্ট আইনজীবী রফিক-উল হকের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দূঃখ প্রকাশ করেছেন।

আদ-দ্বীন হাসপাতালের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার রফিক-উল হক গত ১৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় অসুস্থ হয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর গত ১৭ অক্টোবর সকালে পল্টনের বাসায় ফিরে যান তিনি। তবে ওইদিনই দুপুরের পর তাকে ফের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন ১৮ অক্টোবর দিবাগত রাত ১২টার পর তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। ১৯ অক্টোবর তার করোনা পরীক্ষা করে রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। তখন থেকে অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল এই প্রবীণ আইনজীবীর।

তার মৃত্যুর বিষয় নিয়ে আদ্-দ্বীন হাসপাতালের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাহিদ ইয়াসমিন জানান, বুধবার ২১ অক্টোবর ব্যারিস্টার রফিক-উল হককে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। তিনি হাসপাতালের ডা. রিচমন্ড রোল্যান্ড গোমেজের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। তাকে বার্ধক্যজনিত ইউরিন ইনফেকশন ও রক্ত শূন্যতার কারণে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ায় হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল।

ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ১৯৩৫ সালের ২ নভেম্বর কলকাতার সুবর্ণপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মুমিন-উল হক পেশায় ছিলেন চিকিৎসক। আর মা নূরজাহান বেগম ছিলেন গৃহিণী। কলকাতার সুবর্ণপুরেই রফিক-উল হকের শৈশব ও কৈশোর কাটে।

১৯৫১ সালে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। এরপর ১৯৫৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও ১৯৫৭ সালে দর্শনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এই সময়ে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদে পর পর দুবার সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৮ সালে এলএলবি পাস করে পরবর্তীকালে আইনজীবী হিসেবে কলকাতা হাইকোর্টে পেশাজীবন শুরু করেন।

তিনি ১৯৯০ সালের ৭ এপ্রিল থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন। ২০১৭ সালে বাম পায়ের হাঁটুতে অস্ত্রোপচারের পর থেকে তার চলাফেরা সীমিত হয়ে পড়ে। এ কারণে তিনি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। ৮৫ বছর বয়সী খ্যাতিমান এই মানুষটি বিছানায় শুয়েই সময় পার করছিলেন।

ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় আদ্-দ্বীন হাসপাতালে সাড়ে দশটায়। এর পর নিজ বাসা পল্টনে নেয়া হয় রফিক-উল- হকের মরদেহ। বাদ জোহর বায়তুল মোকাররমের পর সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে ২টায় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে দাফন করা হবে বনানী কবরস্থানে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here