দেশে চলতি বছরের এপ্রিলের শুরুতে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের অস্তিত্ব মেলে। শনাক্ত হওয়ার পর থেকে দেশে প্রতিদিনই ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের হার বাড়ছে। দেশে করোনা আক্রান্তদের নমুনায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট মে মাসে ৪৫ শতাংশ ও জুন মাসে ৭৮ শতাংশ পাওয়া যায়। বর্তমানে দেশে করোনা সংক্রমণে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।
রোববার (৪ জুলাই) প্রতিষ্ঠানের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
আইইডিসিআর বলছে, ২০২০ এর ডিসেম্বর থেকে ২০২১ এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব করোনার নমুনায় আলফা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। ২০২১ এর মার্চে মোট নমুনার ৮২ শতাংশ বিটা ভ্যারিয়েন্ট এবং ১৭ শতাংশ আলফা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। এপ্রিল মাসেও করোনা সংক্রমিতদের মধ্যে বিটা ভ্যারিয়েন্টের প্রাধান্য ছিল।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, করোনা নমুনা পরীক্ষায় যে ধরনের ভ্যারিয়েন্টই পাওয়া যাক না কেন, তা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণই করাই একমাত্র উপায়। এর পাশাপাশি করোনা টিকা প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেককে তা নেওয়া প্রয়োজন।
আইইডিসিআর জানায়, বিশ্বময় করোনা সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাসটি পরিবর্তিত হয়ে নতুন বৈশিষ্ট্য ধারণ করছে, যা ভ্যারিয়েন্ট নামে পরিচিত। রোগীর মৃত্যুহার ও হাসপাতালে ভর্তির হার, রোগ পরবর্তী ৩ টিকা গ্রহণ পরবর্তী রোগ প্রতিরোধ সক্ষমতা বিবেচনায় কিছু কিছু ভ্যারিয়েন্টকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে আলফা, বিটা, গামা ও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে সংক্রমিত মানুষের মধ্যে ভাইরাসটির ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের জন্য দেশে এ রোগটি শনাক্ত হওয়ার শুরু থেকে আইইডিসিআর, আইসিডিডিআরবি যৌথভাবে কাজ করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গত ডিসেম্বর ২০২০ থেকে জুন ২০২১ পর্যন্ত মোট ৬৪৬ টি সংগৃহীত নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং সম্পন্ন করা হয়েছে। এসব নমুনায় আলফা ভ্যারিয়েন্ট, বিটা ভ্যারিয়েন্ট, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট, ইটা ভ্যারিয়েন্ট, বি ১.১.৬১৮ ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে।
তবে এই ভ্যারিয়েন্টগুলোর মধ্যে ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট খুব দ্রুত ছড়াচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে আক্রান্তদের প্রায় ৭৮ শতাংশের নমুনায় এই ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছে আইডিসিআর। আগের সংক্রমণের সঙ্গে এর অনেক পার্থক্য আছে। সে কারণে হয়তো লকডাউনে সচেতন হয়েও ফল কম আসবে। কিন্তু আপাতত এর বাইরে কোনো পথ নেই। হাসপাতালের উপর যতটা সম্ভব চাপ কমাতে হবে। ৫৫ বছরের উর্ধ্বে যারা, তাদের ভ্যাকসিনেশন দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে ব্যাপকভাবে, যেন মৃত্যু কমিয়ে আনা যায়।