১০ বছর বয়সী একমাত্র ছেলে হারিয়ে যাওয়ার ৭০ বছর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে ফিরে পেলেন শতবর্ষী মা মঙ্গলের নেছা। ১০ বছর বয়সে হারিয়ে যায় একমাত্র ছেলে কুদ্দুছ মুন্সি।
বিধবা মা দুই মেয়ে ঝরনা বেগম ও রওশন আরাকে নিয়ে ছেলেকে ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন বরাবর। তার সে স্বপ্ন আজ পূরণ হলো। এক ভাই দুই বোনের মধ্যে কুদ্দুছ মুন্সি বড়। হারিয়ে যাওয়া ১০ বছরের কিশোর আজ দীর্ঘ ৭০ বছর পর ৮০ বছর বয়সী কুদ্দুছ মুন্সিকে ফিরে পেয়েছেন।
শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আশ্রাফবাদ গ্রামের বোন ঝরনা বেগমের বাড়িতে মা ছেলের এ দেখা হয়। ছেলেকে ফিরে পেয়ে ১০২ বছর বয়সী মা আবেগে আপ্লুত হয়ে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
ছেলেও মাকে ফিরে পেয়ে জড়িয়ে কাঁদতে থাকেন। এ দৃশ্য দেখে উপস্থিত শতাধিক নারী-পুরুষের চোখে পানি চলে আসে।
১০ বছরের কিশোর কুদ্দুছ মুন্সি এখন ৮০ বচর বয়সী প্রবীণ। তার তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়ে রয়েছেন। তার গ্রামের বাড়ি পার্শ্ববর্তী নবীনগর উপজেলার বাড্ডা গ্রামে।
তবে, গ্রামে কেউ বাস করেন না। মা মেয়ের সঙ্গে থাকেন। মঙ্গলের নেছা ছেলেকে লেখাপড়া করাতে নবীনগর উপজেলার দীর্ঘশাইল গ্রামের আব্দুল আউয়াল মিয়ার সঙ্গে রাজশাহীর আত্রাই উপজেলায় পাঠায়। সেখানে গিয়ে তিনি হারিয়ে যান। অনেক খোঁজ করেও তাকে আর পায়নি আউয়াল মিয়া। একই উপজেলার নিঃসন্তান সিংশাইর গ্রামের সাদেক মিয়ার স্ত্রী তাকে লালন-পালন করেন।
৩০ বছরে বয়সে বাগমারা উপজেলার সবেদ মিয়ার মেয়ে শুরুজ্জাহানকে বিয়ে করে শ্বশুর বাড়িতেই বসবাস করতে থাকেন। তার তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়ে। বড় ছেলে রাজ্জাক ইরাকে ও দ্বিতীয় ছেলে জান্নান সৌদি আরব থাকেন। ছোট ছেলে হাফেজ সোহেল বাড়িতেই থাকেন। পাঁচ মেয়ের সবারই বিয়ে হয়ে গেছে।
আত্রাই উপজেলার সিংশাইর গ্রামের এমকে আইয়ূব নামে এক ব্যক্তি তার ফেসবুক আইডিতে কুদ্দুছ মুন্সির হারিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে একটি ভিডিও আপলোড করেন গত ১২ এপ্রিল।
কুদ্দুছ মুন্সি বলেন, হারিয়ে যাওয়ার পর রাজশাহীর আত্রাই উপজেলার সিংশারা গ্রামের সাদিক মিয়ার স্ত্রী আমাকে ছেলের মতো লালন-পালন করে। পরবর্তীতে বিয়ের পর আমার শ্বশুর বাড়িতে বসবাস করে আসছি। কিন্তু মনে মনে আমার মা ও বোনদের খোঁজার চেষ্টা করেছি।
আমার বিশ্বাস ছিল একদিন আমার মার সন্ধান আমি পাবো। মায়ের বুকে ফিরতে পেরে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ আমার আমাকে মনে হচ্ছে। বাকী জীবনটা মার সঙ্গেই থাকবো।