জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এরশাদের মৃত্যু সংবাদটি নিশ্চিত করে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। দীর্ঘদিন তিনি বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
৯০ বছর বয়সী এরশাদ দীর্ঘদিন রক্তের ক্যান্সার মাইডোলিসপ্লাস্টিক সিনড্রোমে আক্রান্ত ছিলেন । রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম। শেষ দিকে তার ফুসফুসে সংক্রমণ দেখা দিয়েছিল , কিডনিও কাজ করছিল না। আস্তে আস্তে তার শরীরের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অকার্যকর হয়ে যায় ।
ভাইয়ের শারীরিক অবস্থার কথা জানাতে গিয়ে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের শনিবার বলেছিলেন, ‘এরশাদের কোনো অঙ্গ আর স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে না। প্রতিদিন ডাকলে চোখে মেলে তাকানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আজ তা করেননি।’
জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের এরশাদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সিঙ্গাপুরের জেনারেল হসপিটালের চিকিৎসকরা লাইফ সাপোর্টে রেখে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুর নেওয়ার ব্যাপারে রাজি হননি।
সাবেক সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮২ সালে এক রক্তপাতহীন সামরিক অভূত্থানে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হন এবং টানা ৮ বছর দেশ শাসন করেন। ১৯৯০ সালে গণতন্ত্রকামী মানুষের গণঅভূত্থানে তিনি ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। পরে বেশ কিছু অভিযোগে তিনি কারাবরণও করেন। কারাগারে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুরের ৫টি আসনে নির্বাচিত হন। পরবর্তী প্রতিটি নির্বাচনে তিনি রংপুর থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
তিনি প্রথমে জাতীয় ফ্রন্ট ও পরে ফ্রন্ট নাম পরিবর্তন করে জাতীয় পার্টি নামে রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরবর্তীতে বেশ কিছু উপদলে বিভক্ত হয়ে নানাভাবে জাতীয় পার্টি নামেই রয়েছে। তবে, এরশাদের জাতীয় পার্টিই তাদের মূল দলীয় প্রতীক লাঙ্গল নিয়ে সব নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর তিনি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫২ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। ১৯৭৫ সালের ২৪ আগস্ট ভারতে প্রশিক্ষণরত অবস্থায় তিনি মেজর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পান ও উপসেনা প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান।
এরশাদের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বি মিয়া, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, তথ্যমন্ত্রী ড. মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ, পরিকল্পনামন্ত্রী এম. এ. মান্নান ও পরিবেশ বন ও জলবায়ু মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন পৃথক শোক জানিয়েছেন।