মিয়ানমারজুড়ে জান্তার বিরুদ্ধে সেনাশাসনবিরোধী গোষ্ঠীগুলোর প্রতিরোধ লড়াই জোরদার হয়েছে। মিয়ানমারের মান্দালয়, ইয়াঙ্গুন, সেগিং, মাগউই, এয়ারবতিসহ বিভিন্ন শহর এবং কায়াহ ও শান রাজ্যে জান্তা সেনাদের সঙ্গে তুমুল লড়াই হয়েছে তাদের। কয়েক দিন ধরে চলা এসব হামলা–সংঘর্ষে ৫০ জনের বেশি সেনা নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। হতাহত হয়েছে বেসামরিক মানুষও।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ইরাবতির এক প্রতিবেদনে আজ সোমবার জানানো হয়েছে, সাগাইং অঞ্চলের মায়ং শহরের কিয়াউকিত পুলিশ স্টেশনে রোববার বিকেলে প্রতিরোধ যোদ্ধারা অভিযান চালান। এতে প্রতিরোধযোদ্ধাদের সাতটি দল অংশ নেয় বলে জানিয়েছে ইউনিয়ন ডিফেন্স অ্যান্ড লিবারেশন অ্যালায়েন্স। দুই ঘণ্টা ধরে চলা গোলাগুলিতে অন্তত পাঁচ জান্তা সেনা নিহত ও একজন প্রতিরোধযোদ্ধা আহত হয়েছেন।

এদিকে মায়ং শহরে গত শনিবার বিকেলে পিপল’স ডিফেন্স ফোর্সের (পিডিএফ’এস) আটটি দল একযোগে জান্তা সেনাবহরের চলার পথে মাইন পুঁতে রাখে। মায়ংয়ের সিভিলিয়ান’স ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি অরগানাইজেশন জানিয়েছে, এই হামলায় দুটি সাজোয়াযান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিহত হয়েছে অন্তত ১৫ জান্তা সেনা।

শান রাজ্যের পেকোন শহরের প্রবেশমুখে রোববার সকালে পিডিএফ’এস ও কারেন ন্যাশনালিটিস ডিফেন্স ফোর্সের যোদ্ধারা জান্তার বহরে যৌথ অভিযান চালায়। ওই বহরে পাঁচটি সাজোয়াযানে অন্তত ৫০ জন সেনাসদস্য ছিলেন। তাঁদের মধ্যে অন্তত ১০ সেনার নিহত হওয়ার খবর প্রকাশ করেছে ইরাবতি।

কয়েক মিনিটের এই হামলার জবাবে দশটির বেশি কামানের গোলা ছুড়েছে জান্তা সেনারা। যার কয়েকটি বেসামরিক এলাকায় গিয়ে পড়েছে। এতে ওই শহরে ৪৪ বছর বয়সী এক নারী নিহত এবং শিশুসহ অন্তত পাঁচজন বেসামরিক মানুষ আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পিডিএফ’এস। পাল্টাপাল্টি হামলার পর শহরটি ছেড়ে পালিয়েছে হাজারো মানুষ।

রোববার বিকেলে মিয়ানমারের কাংইদায়ুন্ত শহরে ইয়াঙ্গুন–পাথেইন মহাসড়কে সেনাবহরে বোমা হামলা চালিয়েছে পাথেইন স্পেশাল টাস্কফোর্সের সদস্যরা। এই হামলায় তিন জান্তা সেনা নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও দুই সেনা। এ সময় আহত এক প্রতিরোধযোদ্ধাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে জান্তা সেনারা। এদিন পাকোক্কু শহরে জান্তার বহরে বোমা হামলা চালিয়েছে পিডিএফ’এস। তবে এই হামলায় হতাহতের তথ্য পাওয়া যায়নি।

এর আগে শনিবার দিনজুড়ে কারে শহরে সেনাবহরে পিডিএফ’এসের বোমা হামলায় অন্তত পাঁচ জান্তা সেনা আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদিন ইয়াঙ্গুন ও মান্দালয়ে জান্তার ওপর হামলা চালিয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। ইয়াঙ্গুনে একাধিক হামলায় পাঁচজনের বেশি জান্তা সেনা নিহত হয়েছে।

গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। আটক করা হয় অং সান সু চিসহ বেসামরিক সরকারের নেতাদের। এরপর সেনাশাসনের প্রতিবাদ এবং সু চিসহ রাজবন্দীদের মুক্তির দাবিতে রাজপথে নামে দেশটির মানুষ। যুক্ত হয় সেনাবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো। অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ ও প্রতিরোধযুদ্ধে এখন পর্যন্ত দেশটিতে ১ হাজার ১০০ জনের বেশি বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আট হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পর্যবেক্ষণকারী দল দ্য অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here